সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

স্রষ্টাভাবনা

প্রথম ভাগ: দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা  | | পর্ব-১: উৎসের সন্ধানে উৎসের সন্ধান করা মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। মানুষ তার আশেপাশের জিনিসের উৎস জানতে চায়। কোথাও পিঁপড়ার লাইন দেখলে সেই লাইন ধরে এগিয়ে গিয়ে পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বের করে। নাকে সুঘ্রাণ ভেসে এলে তার উৎস খোঁজে। অপরিচিত কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী কিংবা যেকোনো অচেনা জিনিস দেখলে চিন্তা করে – কোথা থেকে এলো? কোথাও কোনো সুন্দর আর্টওয়ার্ক দেখলে অচেনা শিল্পীর প্রশংসা করে। আকাশের বজ্রপাত, বৃষ্টি, রংধনু কিংবা সাগরতলের অচেনা জগৎ নিয়েও মানুষ চিন্তা করে। এমনকি ছোট শিশু, যে হয়তো কথাই বলতে শেখেনি, সে-ও কোনো শব্দ শুনলে তার উৎসের দিকে মাথা ঘুরায়। অর্থাৎ, মানুষ জন্মগতভাবেই কৌতুহলপ্রবণ। একটা বাচ্চা জ্ঞান হবার পর চিন্তা করে – আমি কোথা থেকে এলাম? আরো বড় হবার পর চিন্তা করে – আমার মা কোথা থেকে এলো? এমনি করে একসময় ভাবে, পৃথিবীর প্রথম মা ও প্রথম বাবা, অর্থাৎ আদি পিতা-মাতা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? চারিদিকের গাছপালা, প্রকৃতি, পশুপাখি, গ্রহ-নক্ষত্র-মহাবিশ্ব – এগুলিরই বা সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন উৎসুক মনে খেলে যায়। তখনই শুরু হয় সমস্যা। নির
সাম্প্রতিক পোস্টগুলি

ব্যাকট্র্যাকিং | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: উৎসের সন্ধানে | সূচীপত্র দেখুন আদি পিতা-মাতাকে কে তৈরী করল? কোন সে পুতুল কারিগর? একজন ভাস্কর যেভাবে পাথর কুঁদে মানুষের মূর্তি তৈরী করেন, কিংবা মাটি দিয়ে তৈরী করেন পুতুল! এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পাই ব্যাকট্র্যাকিং পদ্ধতিতে। মানুষের ব্যাকট্র্যাকিং আমাকে জন্ম দিয়েছেন (সৃষ্টি করেছেন) আমার মা। আর আমার মা-কে জন্ম দিয়েছেন আমার নানী, কিন্তু তাঁরও তো মা ছিল! আমরা যদি এভাবে পিছনের দিকে যেতে শুরু করি, তাহলে: আমার মা, তার মা, তার মা… এভাবে করে একদম শুরুতে অবশ্যই এমন এক মা থাকতে হবে, যার আর কোনো মা নাই। সে-ই পৃথিবীর প্রথম মা। এই পদ্ধতিটাকে বলা হয় ব্যাকট্র্যাকিং (backtracking)। অর্থাৎ, কোনোকিছুর পিছনের কারণকে খুঁজে বের করা। স্রষ্টার ব্যাকট্র্যাকিং আচ্ছা, সেই আদি মাতার সৃষ্টি হলো কিভাবে? তার নিশ্চয়ই কোনো মাতৃগর্ভে জন্ম হয়নি, কারণ সে-ই তো প্রথম মা, আদি মাতা! অতএব, নিশ্চয়ই কোনো পুতুল কারিগর নিজ হাতে গড়েছিলেন মানবজাতির আদি মাতাকে! তো, সেই আদি মাতাকে যিনি সৃষ্টি করলেন, সেই স্রষ্টাকেই আমরা বলছি “মানুষের স্রষ্টা”। এখন কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারে, “মানুষের স্রষ্টাকে” সৃষ্টি করল

পরম স্রষ্টার মৃত্যু? | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: ব্যাকট্র্যাকিং | সূচীপত্র দেখুন প্রশ্ন: আদি পিতা-মাতা মরে গেছে; আদি স্রষ্টাও কি মরে গেছে? শেষ হয়ে গেছে? শেষটা নিয়ে কথা বলার আগে শুরুটা নিয়ে কথা বলতে হবে। যেমন: আজকে আপনি বেঁচে আছেন? হ্যাঁ। গতকাল বেঁচে ছিলেন? হ্যাঁ। পরশু? তার আগেরদিন? একবছর, দুইবছর, দশবছর আগে? হ্যাঁ। কিন্তু ১,০০০ বছর আগে? না। কারণ, আপনার তখন সৃষ্টিই (জন্ম) হয়নি। এবার পরম স্রষ্টার ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রশ্ন করি: মানব সৃষ্টির সময় তিনি বেঁচে ছিলেন? হ্যাঁ। তার আগেরদিন বেঁচে ছিলেন? হ্যাঁ। তার আগেরদিন? তার দশবছর আগে? তারও ১,০০০ বছর আগে? হ্যাঁ। এভাবে, যত পিছনেই যান না কেন, তিনি বেঁচে ছিলেন। কেননা, তার তো কোনো শুরু নেই, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি, সৃষ্টি করেনি, কিন্তু তিনি অস্তিত্বমান। (He exists, but He was never created. He never had any beginning, yet He exists.) আবারও একটু বলি। মানব সৃষ্টির ১০,০০০ বছর আগেও কি পরম স্রষ্টা বেঁচে ছিলেন? হ্যাঁ। ১০০,০০০? এভাবে আপনি যতই সংখ্যা বাড়ান না কেন, উত্তর আসবে – হ্যাঁ। ১ এর পিছনে যতই শূন্য লাগান, এভাবে যত বড় সংখ্যা বানানোরই চেষ্টা করেন না কেন, সেই সময়ে

ইনফিনিটিতে বসবাস | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: পরম স্রষ্টার মৃত্যু? | সূচীপত্র দেখুন -∞… … … 0 … … …+∞ উপরের জিনিসটাকে ম্যাথমেটিক্স তথা গণিতশাস্ত্রে বলা হয় সংখ্যারেখা। মাইনাস ইনফিনিটি টু জিরো টু প্লাস ইনফিনিটি। গাণিতিকভাবে সংখ্যারেখায় এভাবেই অসীমকে দেখানো হয়। একজন গণিতবিদকে যদি বলেন, তবে সে বলবে, স্রষ্টার অবস্থান ঐ মাইনাস ইনফিনিটিতে। কিন্তু আমরা কি গণিতবিদ? নাহ। আমরা দার্শনিক। তাই আমাদের স্রষ্টাভাবনা একটু ভিন্নরকম হবে। যে ব্যক্তি কখনো ম্যাথমেটিক্স পড়েনি, সে-ও আমাদের যুক্তি বুঝতে পারবে। আমাদের যুক্তি হবে সবার জন্যে: সর্বজনীন। সেইযে আমরা বলেছিলাম, পৃথিবীতে কোনো আস্তিক-নাস্তিক-বিজ্ঞানী নেই, কোনো গণিতবিদও নেই – এমন নিরপেক্ষ, অপ্রভাবিত অবস্থায় আপনার স্রষ্টাভাবনা কেমন হত? আমরাতো সেটাই ভাবতে বসেছি। গত পর্বের প্রসঙ্গ ধরে শুরু করি। পরম স্রষ্টা কি ১,০০০ বছর আগে বেঁচে ছিলেন? হ্যাঁ। ১০,০০০ বছর আগে? হ্যাঁ। তারও আগে? হ্যাঁ। এভাবে যত শূন্যই লাগাই না কেন, যত লক্ষ কোটি বছরের অতীত চিন্তা করি না কেন, তারও আগে তিনি ছিলেন। আর সেই সময়টাকেই আমরা বলছি অসীম, অনন্ত, ইনফিনিটি। এবার আসুন প্রশ্ন করি। প্রশ্ন: ইনফিনিটির শুরু কোথায়?

ভুল প্রশ্ন | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: ইনফিনিটিতে বসবাস | সূচীপত্র দেখুন আমরা অনেকসময় ভুল প্রশ্ন করে বসি। যেমন, “গতকাল তো স্রষ্টা বেঁচে ছিল, আজও কি বেঁচে আছে?” কিংবা: “মানব সৃষ্টির আগে তো পরম স্রষ্টা বেঁচে ছিল, কিন্তু আজও কি বেঁচে আছে?” এগুলো সবই ভুল প্রশ্ন। কেন? সেটা আমরা আগের পর্ব “ইনফিনিটিতে বসবাস”-এ আলোচনা করেছি। কারণ, স্রষ্টা তো সময়ের ডাইমেনশানে বসবাস করেন না। তিনি তো সময়ের ঊর্ধ্বে (beyond the limitations of time)। তাই তাঁর সাথে সময়কে জড়িয়ে প্রশ্ন করা যায় না। এগুলো দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে “ভুল প্রশ্ন” ক্যাটেগরিতে পড়ে। যেমন, আপনি যদি প্রশ্ন করেন, “ভাই, আপনার পোষা বিড়ালটি কি ব্যাটিং ভালো পারে, নাকি বোলিং ভালো পারে?” এটা একটা “ভুল প্রশ্ন”। কেন? কারণ ক্রিকেট খেলাই তো বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না, তার আবার ব্যাটিং-বোলিং কী! কিন্তু তাহলে কেন মানুষ যুগযুগ ধরে ভুল প্রশ্ন করে আসছে স্রষ্টার ব্যাপারে? ঐযে, প্রভাবিত মন! আগেই তো তাকে ধর্মের ব্রেইনওয়াশিং দিয়ে দেওয়া হয়েছে! কিংবা দেওয়া হয়েছে নাস্তিকতার ব্রেইনওয়াশিং। কিংবা হয়ত নাস্তিকের যুক্তিখণ্ডন করতে দৌড়ে গিয়ে ধর্মগুরুর কাছ থেকে দুইটা কথা শিখে এসে মুখস্থ আউড়ি

একাধিক স্রষ্টা | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: ভুল প্রশ্ন | সূচীপত্র দেখুন পরম স্রষ্টা কি এক, নাকি একাধিক? মানুষের স্রষ্টা, তার স্রষ্টা, তার স্রষ্টা… এভাবে একদম শুরুতে “মানুষের পরম স্রষ্টা”। বিড়ালের স্রষ্টা, তার স্রষ্টা, তার স্রষ্টা… একইভাবে একদম শুরুতে “বিড়ালের পরম স্রষ্টা”। এভাবে করে যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখা যাবে যে, উপরে যত স্রষ্টার কথা বলা হয়েছে, তারা মোট দুই ক্যাটেগরিতে বিভক্ত: ১. পরম স্রষ্টা ২. দ্বিতীয় স্তরের স্রষ্টা (যাদের স্রষ্টা আছে)। উপরের উদাহরণে পরম স্রষ্টা পেলাম দুইজন: মানুষের পরম স্রষ্টা ও বিড়ালের পরম স্রষ্টা। কিন্তু দ্বিতীয় স্তরের স্রষ্টা? অনে...ক! মানুষ + মানুষের স্রষ্টা, তার স্রষ্টা, তার স্রষ্টা… (ধরি, ১০০ জন) + বিড়াল + বিড়ালের স্রষ্টা, তার স্রষ্টা, তার স্রষ্টা… (ধরি, ১০০ জন) = ২০২ জন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, দ্বিতীয় স্তরের স্রষ্টার সংখ্যা অনেক। এতে কোনো সন্দেহ নাই। অন্ততঃপক্ষে মানুষ, বিড়াল, বাবুই পাখি, পিঁপড়া, মৌমাছিসহ পৃথিবীর প্রায় সব জীবই কিছু না কিছু সৃষ্টি করে, সেই অর্থে তারা স্রষ্টা। কিন্তু তারা দ্বিতীয় স্তরের স্রষ্টা। কেননা, তাদেরও স্রষ্টা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের পরম স্রষ্টা কি

গণিতের অসীম বনাম দর্শনের অসীম | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: একাধিক স্রষ্টা | সূচীপত্র দেখুন আচ্ছা, পৃথিবীতে মোট পরমাণুর সংখ্যা কত? কে জানে! কিন্তু সেটা কি অসীম, না সসীম? অবশ্যই সসীম (finite)। সূর্যের ভিতরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুর সংখ্যা? সসীম। সাগরের ভিতরে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সংখ্যা? সসীম। বস্তুজগতে (material world-এ) যত বস্তু তথা matter আছে, তার মোট পরমাণুর সংখ্যা অসীম (infinite), নাকি সসীম (finite)? অবশ্যই ফাইনাইট (সসীম)। তারমানে, সৃষ্টিজগতের ভিতরে অসীম বা ইনফিনিটি বলে কিছু নাই। ইনফিনিটি হলো বস্তুজগত ও সৃষ্টিজগতের ঊর্ধ্বে। বস্তু তথা matter এর সৃষ্টির আগে থেকেও যিনি বিরাজমান, সেই পরম স্রষ্টাই হলেন true infinity. (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং) সময় ও সংখ্যার সীমাবদ্ধতা সহকারে তিনিই মহাবিশ্বের সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন সকল অনু-পরমাণু-ইলেকট্রন। তিনিই মহাবিশ্বের স্রষ্টা। প্রশ্ন: তাহলে ম্যাথমেটিক্সের ইনফিনিটি? উত্তর: ম্যাথমেটিক্সে সংখ্যারেখার দুই প্রান্তে যে ইনফিনিটিকে রাখা হয়, ওটা কেবল গণিতের স্বার্থে। প্রকৃত ইনফিনিটি আসলে গণিতের বিষয় নয়। ইনফিনিটির প্রকৃত দর্শন পাওয়া যাবে দার্শন

সত্যের পথে… | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: গণিতের অসীম বনাম দর্শনের অসীম | সূচীপত্র দেখুন হ্যাঁ, আমি সত্যকে জেনেছি। রাত্রির অন্ধকার চিরে ভোরের প্রথম শুভ্র রেখা যেভাবে দেখা দেয় আকাশে, তেমনিভাবে আমার খোদাকে চিনেছি। আমার স্রষ্টা, আমার পরম প্রভু। কখনো ভোর দেখেছেন, ভোর? কিভাবে পরম প্রভু পৃথিবীটাকে জাগিয়ে তোলেন? সেটা শহুরে বারান্দায় গিয়েই দেখুন কি গ্রামের ছায়াঘেরা উঠান কিংবা সমুদ্রতটে – আজ থেকে ভোরগুলো আর আগের মতন হবে না। কারণ এতদিন ভোরগুলো ছিল “প্রকৃতির জেগে ওঠা”। কিন্তু আজ থেকে ভোরগুলো হলো পরম প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর ঘুম ভাঙা। কারণ আমরা চিনে নিয়েছি পরম প্রভুকে। কী বিস্ময়কর! প্রিয় পাঠক! এ আপনারই দার্শনিক যাত্রা। এটা কোনো নিছক বই নয় যে, টানা কয়েক ঘন্টা পড়ে তারপর শেলফে তুলে রাখবেন! এটা আপনার-আমার দার্শনিক যাত্রা: মহান প্রভুর দিকে যাত্রা। একারণেই বারবার বলেছি, প্রয়োজনে সময় নিন, দুই-দশদিন ভাবুন, ধ্যান করুন…। আপনার এই দার্শনিক যাত্রায় যদি নিজেকে নিরপেক্ষ, অপ্রভাবিত রাখার স্বার্থে সমাজ থেকে দূরে গিয়ে দুটো দিন কাটিয়ে আসতে হয়, তবে তা-ই করুন! সাগরতীরে দাঁড়িয়ে, কিংবা নির্জন কোনো জায়গায় প্রকৃতির কোলে বসে কল্পন

দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা ও সূরা ইখলাস | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আগের পর্ব: সত্যের পথে... | সূচীপত্র দেখুন দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনাকে সংক্ষিপ্ততম উপায়ে প্রকাশ করেছে কুরআন, সূরা ইখলাস-এ। “ব্যাকট্র্যাকিং” পর্ব থেকে শুরু করে একটু একটু করে অগ্রসর হয়ে “একাধিক স্রষ্টা” পর্বে এসে “পরম স্রষ্টার” ব্যাপারে আমরা মোটামুটিভাবে পাঁচটি অকাট্য সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম: ১. তিনি অসৃষ্ট। অতএব, তিনি জন্মগ্রহণ করেননি। ২. তিনি সময়ের ঊর্ধ্বে। ইনফিনিটিতে তাঁর বাস। তিনিই ইনফিনিটি। ৩. তাঁর সৃষ্টিক্ষমতা আছে। তিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি করতে পারেন। ৪. তিনি মহাবিশ্বের পরম স্রষ্টা: তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। ৫. তিনি সংখ্যার ঊর্ধ্বে। তিনি একক, অবিভাজ্য। আর সূরা ইখলাস সে কথাগুলিরই প্রতিধ্বনি করছে। সূরা ইখলাস বলছে যে, তিনি একক (আহাদ)। আরো বলছে যে, তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি বা কাউকে জন্মও দেননি (লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইয়ুলাদ)। এই দুইটি পয়েন্ট আমাদের দার্শনিক স্রষ্টাভাবনার সিদ্ধান্তের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। এবং বাকি দুটি যে বাক্য, তা-ও আসলে আমাদের সিদ্ধান্তগুলোরই অনুসিদ্ধান্ত: আল্লাহ অমুখাপেক্ষী (আল্লাহুস সামাদ), এবং তাঁর সমতুল্য কোনো কিছুই নেই (ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আ

সূরা ইখলাস ও নিরপেক্ষ মন | দার্শনিকের কুরআন যাত্রা

দ্বিতীয় ভাগ: দার্শনিকের কুরআন যাত্রা | | পর্ব-১: সূরা ইখলাস ও নিরপেক্ষ মন             قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (١) اللَّهُ الصَّمَدُ (٢) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (٣) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (٤) ক্বুল (বলো)! হু আল্লাহু আহাদ (তিনিই আল্লাহ, একক)! আল্লাহুস সামাদ (আল্লাহ অমুখাপেক্ষী)। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইয়ুলাদ (তিনি কাউকে জন্ম দেননি, এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি), ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ (আর কোনোকিছুই তাঁর সাথে তুলনীয় নয়)। অর্থাৎ, আল্লাহ একক, অমুখাপেক্ষী, জন্ম দেয়া-নেয়ার ঊর্ধ্বে, এবং তাঁর সাথে তুলনাযোগ্য কিছু থাকতে পারে না। আমরা যখন নিরপেক্ষভাবে পরম স্রষ্টাকে নিয়ে চিন্তা করেছি, তখন শেষে এসে এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছি। এবং কী আশ্চর্য, কুরআন সে কথারই প্রতিধ্বনি করছে। সে কথাই ঘোষণা করছে। এতটুকুই একজন নিরপেক্ষ, অপ্রভাবিত দার্শনিকের পক্ষে কুরআনের উপর আস্থা সৃষ্টি হবার জন্য যথেষ্ট। এতটুকুই যথেষ্ট বোঝার জন্য যে, কুরআন পরম স্রষ্টার পক্ষ থেকে পাঠানো দিক-নির্দেশিকা: পথ-প্রদর্শক গ্রন্থ, স্রষ্টার বাণী। কিন্তু তবুও নানান প্রশ্ন মনে খেলে যায়। কুরআ

কুরআনের দর্শন | দার্শনিকের কুরআন যাত্রা

 আগের পর্ব: সূরা ইখলাস ও নিরপেক্ষ মন | সূচীপত্র দেখুন কুরআনের দর্শন (philosophy) কেমন? আসলে একটি ছোট লেখায় কখনোই গোটা কুরআনের দর্শন পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব না। কুরআনের যেকোনো ছাত্র একবাক্যে স্বীকার করবে যে, মৃত্যু পর্যন্ত একজন ছাত্রের “কুরআন যাত্রা” শেষ হয় না। তাই “কুরআনের দর্শন” শিরোনামের যেকোনো লেখাই অসম্পূর্ণ। এই লেখাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবুও আমাদের আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। অপরের বক্তব্য শুনতে হবে فَبَشِّرْ عِبَادِي (١٧) الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ وَأُولَئِكَ هُمْ أُولُو الألْبَابِ (١٨) “অতএব, (হে রাসূল!) সেই বান্দাদের সুসংবাদ দিন যারা বক্তব্য শোনে, অতঃপর তার মধ্য থেকে যা কিছু অধিকতর উত্তম তার অনুসরণ করে। এরাই হচ্ছে তারা যাদেরকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখিয়েছেন এবং এরাই হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানবান।” (সূরা যুমার, ৩৯:১৭-১৮) অর্থাৎ, কুরআনের দর্শন হলো মুক্ত আলোচনার দর্শন। সবার মতামত শুনতে হবে, তারপর সেগুলি যাচাই করতে হবে। যুক্তিবুদ্ধির মানদণ্ডে যেগুল

কুরআন কি যুক্তিবাদী? | দার্শনিকের কুরআন যাত্রা

আগের পর্ব: কুরআনের দর্শন | সূচীপত্র দেখুন অনেকে বলে: “দেখো, ধর্ম হলো বিশ্বাসের বিষয়, এখানে যুক্তি খুঁজলে হবে না।” দুঃখজনক ব্যাপার হলো, প্রচলিত প্রায় সকল ধর্মের অনুসারীর মাঝেই কমবেশি এই ধারণা প্রচলিত আছে। অথচ যুক্তি হলো দর্শনের প্রধান হাতিয়ার। যুক্তিতর্ক না করলে আমরা কিভাবে দার্শনিক স্রষ্টাভাবনা করতাম? আর কিভাবেই বা পরম স্রষ্টাকে চিনতাম? যদি যুক্তিতর্ক না-ই করব, তাহলে তো সবাই যার যার ধর্মের মধ্যেই থেকে যেত; এক ধর্ম থেকে আরেক ধর্মে আসতে পারত না। কিংবা নাস্তিকরাও আস্তিক হতে পারত না। একজন হিন্দু যদি বলে যে, দেখো এই মূর্তি আমার ভগবান, এটা আমার বিশ্বাস, অতএব এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। একইভাবে খ্রিষ্টান যদি বলে যে, দেখো, যীশু হলো খোদার পুত্র, ব্যস, এটা আমার বিশ্বাস; স্রষ্টার পুত্র হওয়া সম্ভব কিনা, এই নিয়ে যুক্তিতর্ক আমি করব না, কারণ ধর্ম হলো বিশ্বাসের বিষয়, যুক্তির বিষয় নয়। একইভাবে মুসলিম যদি বলে যে দেখো, কুরআনকে যুক্তি দিয়ে যাচাই করলে হবে না, তোমাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে। আর নাস্তিক যদি বলে যে, দেখো, বিজ্ঞানীরা যা বলবে, সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। এইভাবে যদি সবাই গোঁড়ামি করে, তাহলে