সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গণিতের অসীম বনাম দর্শনের অসীম | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা

আচ্ছা, পৃথিবীতে মোট পরমাণুর সংখ্যা কত? কে জানে! কিন্তু সেটা কি অসীম, না সসীম? অবশ্যই সসীম (finite)। সূর্যের ভিতরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুর সংখ্যা? সসীম। সাগরের ভিতরে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সংখ্যা? সসীম। বস্তুজগতে (material world-এ) যত বস্তু তথা matter আছে, তার মোট পরমাণুর সংখ্যা অসীম (infinite), নাকি সসীম (finite)? অবশ্যই ফাইনাইট (সসীম)।

গণিতের অসীম বনাম দর্শনের অসীম | দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা




তারমানে, সৃষ্টিজগতের ভিতরে অসীম বা ইনফিনিটি বলে কিছু নাই। ইনফিনিটি হলো বস্তুজগত ও সৃষ্টিজগতের ঊর্ধ্বে। বস্তু তথা matter এর সৃষ্টির আগে থেকেও যিনি বিরাজমান, সেই পরম স্রষ্টাই হলেন true infinity. (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং) সময় ও সংখ্যার সীমাবদ্ধতা সহকারে তিনিই মহাবিশ্বের সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন সকল অনু-পরমাণু-ইলেকট্রন। তিনিই মহাবিশ্বের স্রষ্টা।

প্রশ্ন: তাহলে ম্যাথমেটিক্সের ইনফিনিটি?

উত্তর: ম্যাথমেটিক্সে সংখ্যারেখার দুই প্রান্তে যে ইনফিনিটিকে রাখা হয়, ওটা কেবল গণিতের স্বার্থে। প্রকৃত ইনফিনিটি আসলে গণিতের বিষয় নয়। ইনফিনিটির প্রকৃত দর্শন পাওয়া যাবে দার্শনিক ভাবনাতে, যেটা আমরা গত দুই পর্বে আলোচনা করে এসেছি।

এখন প্রভাবিত মনের কোনো মানুষ বলতে পারে: “এহ! জগতের কত বড় বড় ম্যাথমেটিশিয়ান ইনফিনিটি আর জিরো নিয়ে কাজ করে গেল, আর উনি এসে দুইলাইন লিখেই সমাধান করে দিচ্ছেন! আবার বলছেন যে, এটা ম্যাথমেটিক্সের ক্ষেত্রই নয়!”

কিন্তু প্রিয় পাঠক, সেটাতো প্রভাবিত মনের চিন্তা। প্রভাবিত মন ওভাবে চিন্তা করবেই। তাদেরকে ওভাবে চিন্তা করতে দিন। কিন্তু আসুন, আমরা নিরপেক্ষ, অপ্রভাবিত মন নিয়ে আমাদের স্রষ্টাভাবনায় অগ্রসর হই। যদি আমরা পক্ষপাতহীনভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে স্রষ্টাভাবনা করতে পারি, তবে আমাদের সমগ্র অস্তিত্ব সাক্ষ্য দেবে যে: হ্যাঁ, আমি সত্যকে জেনেছি।

_______________________________

“সৃষ্টিজগতের ভিতরে ইনফিনটি নাই।

গণিতে নয়, বরং দর্শনেই অসীমের প্রকৃত ধারণা পাওয়া সম্ভব।”

নিচের কোডটি মোবাইলে স্ক্যান করে ইনফিনিটি সম্পর্কে আপনার ভাবনা আমাদের জানান।



পরের পর্ব: সত্যের পথে... | সূচীপত্র দেখুন

মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক জনপ্রিয়

স্রষ্টাভাবনা

প্রথম ভাগ: দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা  | | পর্ব-১: উৎসের সন্ধানে উৎসের সন্ধান করা মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। মানুষ তার আশেপাশের জিনিসের উৎস জানতে চায়। কোথাও পিঁপড়ার লাইন দেখলে সেই লাইন ধরে এগিয়ে গিয়ে পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বের করে। নাকে সুঘ্রাণ ভেসে এলে তার উৎস খোঁজে। অপরিচিত কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী কিংবা যেকোনো অচেনা জিনিস দেখলে চিন্তা করে – কোথা থেকে এলো? কোথাও কোনো সুন্দর আর্টওয়ার্ক দেখলে অচেনা শিল্পীর প্রশংসা করে। আকাশের বজ্রপাত, বৃষ্টি, রংধনু কিংবা সাগরতলের অচেনা জগৎ নিয়েও মানুষ চিন্তা করে। এমনকি ছোট শিশু, যে হয়তো কথাই বলতে শেখেনি, সে-ও কোনো শব্দ শুনলে তার উৎসের দিকে মাথা ঘুরায়। অর্থাৎ, মানুষ জন্মগতভাবেই কৌতুহলপ্রবণ। একটা বাচ্চা জ্ঞান হবার পর চিন্তা করে – আমি কোথা থেকে এলাম? আরো বড় হবার পর চিন্তা করে – আমার মা কোথা থেকে এলো? এমনি করে একসময় ভাবে, পৃথিবীর প্রথম মা ও প্রথম বাবা, অর্থাৎ আদি পিতা-মাতা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? চারিদিকের গাছপালা, প্রকৃতি, পশুপাখি, গ্রহ-নক্ষত্র-মহাবিশ্ব – এগুলিরই বা সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন উৎসুক মনে খেলে যায়। তখনই শুরু হয় সমস্যা। নির

খোদার ন্যায়বিচার | অনন্তের পথে

আগের পর্ব: আল্লাহ কেন পথভ্রষ্ট করেন? | সূচীপত্র দেখুন প্রশ্ন: এমনও অনেকে আছে, যারা ইসলামের নামও শোনেনি, যাদের কাছে কুরআন পৌঁছায় নাই, তাদের কী হবে? তারা কেন জাহান্নামে যাবে? তাদের কী দোষ? কোথায় খোদার ন্যায়বিচার? নাস্তিকদের একটা কমন প্রশ্ন এটা। এবং প্রশ্নটা অবশ্যই অত্যন্ত যৌক্তিক। কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মুসলমানই ইসলামকে যৌক্তিক ও দার্শনিক মানদণ্ডে যাচাই করে তারপর সত্য হিসেবে গ্রহণ করে মানে না, বরং তারা মানে বাপ-দাদার ধর্ম হিসেবে, (অন্ধ)বিশ্বাসের বস্তু হিসেবে। আর তাই এসকল প্রশ্নের যৌক্তিক সত্য জবাবও তারা দিতে পারেন না। দেবেনই বা কিভাবে, নিজেই তো জানেন না! উপরন্তু নিজের (অন্ধ)বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য গোঁজামিলে পরিপূর্ণ ভুলভাল ব্যাখ্যা হাজির করেন। তাই তারা বলেন, “মুসলমান না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না। অমুসলিম মাত্রেই জাহান্নামী”, ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ একটা পতিতালয়ে যে মেয়েটির জন্ম হয়, সে মেয়েটি কী দোষ করেছিল তাহলে? ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে এমন সব প্রশ্নকে দূরে ঠেলে “মুসলিম না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না ব্যস” বলে বসেন। অথচ জন্ম ও বেড়ে ওঠার উপর কারো হাত নেই। দুনিয়ার প্রতিটা মানুষই ভিন্ন ভ

আত্মদর্শন | অনন্তের পথে

আগের পর্ব: জ্ঞানের জগত ও হৃদয়ের জগত | সূচীপত্র দেখুন আমি কে? “I am not this hair, not this skin But the soul that lies within.” - Maulana Rumi আমি কে - এই প্রশ্ন যুগে যুগে দার্শনিকদেরকে চিন্তিত করেছে। অনেকে বলেছে, মানব মস্তিষ্কেই কেবল আমিত্বের অনুভূতি বিদ্যমান। কথা হয়ত সত্য। তবে যেহেতু তারা ক্বলবের জগত সম্পর্কে বেখবর, তাই তারা তাদের সীমিত জ্ঞানবৃত্তের ভিতরেই উত্তর দেবার চেষ্টা করেছে। মানুষের আত্মা হলো আসল খলিফা وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ (١٧٢) أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ (١٧٣) “আর (হে রাসূল!) যখন আপনার রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বহির্গত করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং তাদের নিজের ওপর তাদেরকে সাক্ষ্য করলেন; (তাদেরকে প্রশ্ন করলেন,) আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, অবশ্যই, আ