সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আত্মদর্শন | অনন্তের পথে


আমি কে?

“I am not this hair, not this skin

But the soul that lies within.” - Maulana Rumi

আমি কে - এই প্রশ্ন যুগে যুগে দার্শনিকদেরকে চিন্তিত করেছে। অনেকে বলেছে, মানব মস্তিষ্কেই কেবল আমিত্বের অনুভূতি বিদ্যমান। কথা হয়ত সত্য। তবে যেহেতু তারা ক্বলবের জগত সম্পর্কে বেখবর, তাই তারা তাদের সীমিত জ্ঞানবৃত্তের ভিতরেই উত্তর দেবার চেষ্টা করেছে।


মানুষের আত্মা হলো আসল খলিফা



وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ (١٧٢) أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ (١٧٣)



“আর (হে রাসূল!) যখন আপনার রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বহির্গত করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং তাদের নিজের ওপর তাদেরকে সাক্ষ্য করলেন; (তাদেরকে প্রশ্ন করলেন,) আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। (এটা আমি এ জন্য করলাম যে,) আবার না কিয়ামতের দিন তোমরা বল যে, এ বিষয়টি (তুমি যে আমাদের রব তা) আমাদের জানা ছিল না। অথবা বল যে, নিঃসন্দেহে আমাদের বাপ-দাদারা পূর্ব থেকেই শির্ক্‌ করেছিল, আর আমাদের পূর্বেই। আর আমরা তো তাদের পশ্চাৎবর্তী সন্তান-সন্ততি (এবং তাদের অনুসরণকারীমাত্র); তাহলে সেই পথভ্রষ্টরা যা করেছিলো সে জন্য কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে?” (সূরা আ’রাফ, ৭:১৭২-১৭৩)

অর্থাৎ, মানুষ যখন আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে, তখন আর একথা বলার কোনো সুযোগ থাকবে না যে, “আমিতো শুধু আমার বাপ-দাদার দেখাদেখি ধর্মপালন করেছি, আমার কী দোষ?” কেননা পৃথিবীতে দেহ ধারণ করার আগেই আল্লাহপাক আমাদের আত্মার থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যে, তিনিই আমাদের রব, পালনকর্তা! অর্থাৎ, এইযে আমরা মানবদেহে প্রবেশ করেছি, এর আগে থেকেই আমরা অস্তিত্বমান। মানবদেহটা একটা জামার মত। এটি আমরা কিছুদিনের জন্য পরিধান করেছি, আবার এই জামা (দেহ) ছেড়ে চলেও যাব। কিন্তু এই জামা পরিধান করে আমরা যেন নিজেদের আপন সত্তাকে ভুলে না যাই, যেই সত্তা তার রবের সাথে কথোপকথন করত!

সেই সত্তা কি শেষ হয়ে গিয়েছে? নিশ্চয়ই না। মানুষকে যে আল্লাহ তায়ালা তাঁর খলিফা/ প্রতিনিধি করেছেন, সেটা কি এই দেহকে, নাকি আত্মাকে? দেহত্যাগের পরে কি তাহলে আমরা আর আল্লাহর খলিফা থাকি না? না, তা হতে পারে না। সেই সত্তা, যেটাকে সহজ ভাষায় আমরা আত্মা বলি, সেটাই হলো আল্লাহর আসল খলিফা। আল্লাহ তায়ালা যখন মানবকে সৃষ্টি করেছেন, তখন এই আত্মাকেই সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তীতে তাকে দেহের পোষাক দান করেছেন। আল্লাহ যে আত্মা সৃষ্টি করেছেন, সেটাই হলো আমাদের ব্যক্তিসত্তা – সেটাই হলাম “আমি”।

রক্তমাংসের এই দেহের জামা পরিধান করার ফলে কি আমাদের সেই কথোপকথন ক্ষমতা রহিত হয়ে গিয়েছে? যখন আলমে আরহুয়াতে (রুহের জগতে) আল্লাহ আমাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন, এবং আমরা ওয়াদা করেছিলাম! নিশ্চয়ই সেই কথোপকথনের ক্ষমতা তথা ক্বলবের দর্শন, শ্রবণ ও বয়ান রহিত হয়ে যায়নি। বরং আমরাই নিজেদের উপর জুলুম করতে করতে এতটাই নিচে নেমে গিয়েছি যে, কেউ যখন ক্বলবের দর্শন-শ্রবণ ও বয়ানের কথা বলে, তখন সেটাকে আজগুবি ও অবাস্তব জগতের গল্প বলে মনে হয়! বরং এই জগতটাই অবাস্তব, আর ঐ জগতটাই সত্য! বরং আমাদের রক্তমাংসের এই দেহের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তা ও কথাবার্তাই ক্ষণস্থায়ী ভ্রম, ছলনা, মায়া – আমাদের আত্মার অনুভূতিই স্থায়ী, সেটিই বাস্তবতা!


আত্মার ক্ষমতা



أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي الأرْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ



“তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের জন্য সুনিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছেন…” (সূরা হজ্জ্ব, ২২:৬৫)

এইযে সৃষ্টিজগতকে আল্লাহ তায়ালা মানুষের অধীন করে দিয়েছেন, এই অধীনতা কেমন? আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে আমরা সৃষ্টিজগতের নিত্যনতুন বিষয়কে আমাদের অধীনে নিয়ে আসছি। আসলে আল্লাহ তায়ালা সেই ফাংশন আগে থেকেই রেডি করে রেখেছেন। এবং এগুলি আমরা করছি আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা ব্যবহার করে। অথচ আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা সীমিত। আমরা যদি নিজেদের আত্মার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারি, তাহলে কী ঘটা সম্ভব, কল্পনা করতে পারেন? আল্লাহ তায়ালা যে সৃষ্টিজগতকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, সেটা কি শুধুই আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতার অধীন, নাকি আমাদের আত্মার ক্ষমতারও?

যেসব মানুষ তাদের আত্মার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পেরেছে, তারা এমনকিছু করতে পারে, যেটাকে আমরা অলৌকিক বলে থাকি। অথচ আল্লাহর খলিফা হিসেবে এইসকল গুণ মানুষের বৈশিষ্ট্যগত ব্যাপার। আল্লাহপাক বলেন,



فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا


“ফিতরাতুল্লাহ (আল্লাহ তায়ালার ফিতরাত/ বৈশিষ্ট্য/ প্রকৃতি), যার উপরে তিনি মানবকে সৃষ্টি করেছেন… “ (সূরা রুম, ৩০:৩০)

আর তাই মানুষ জন্মগতভাবেই খোদায়ী গুণাবলীর অধিকারী। আল্লাহ দয়ালু, মানুষও দয়ালু। আল্লাহ ন্যায়বিচারক, মানুষও ন্যায়বিচারক। পৃথিবীর সকল অনু-পরমানুর উপর আল্লাহ তায়ালার কর্তৃত্ব, মানুষেরও কর্তৃত্ব। আর মানুষ এই সব কর্তৃত্ব লাভ করেছে আল্লাহর আদেশক্রমে, তাঁর পক্ষ থেকে। অবশ্যই সেটা সীমিত আকারে, এবং কখনোই আল্লাহ তায়ালার সমান নয়। কিন্তু তবুও, এই ক্ষমতা আমাদের আত্মার আছে। আমাদের ব্রেইন ব্যবহার করে আমরা পরমানুর বিক্রিয়া ঘটাই। আমাদের আত্মা তো এর চেয়েও বেশি শক্তিশালী। আমাদের আত্মাকে ব্যবহার করে যদি আমরা সৃষ্টিজগতের অনু-পরমাণুকে আদেশ করি, তখন কী ঘটবে বলে আপনি মনে করেন?

কিন্তু আফসোস! আমরাতো নিজেদের সেই ক্ষমতা সম্পর্কে বেখবর! আমরাতো খাওয়া ঘুম আর যৌন ক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ পশুর মত জীবন যাপন করি। যার ফলে ক্বলবের জগত আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় না, আত্মদর্শন হয় না: আমরা বুঝতে পারি না – আমি কে?


মুজিজা/ কারামত

যারা আল্লাহ তায়ালার ঘনিষ্ঠ বান্দা, তারা ক্বলবের জগতের শুধু অ-আ-ক-খ-ই যে জানেন না নয়, বরং সেই জগতে তারা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ন্যায় আচরণ করেন। তারা চাইলেই সৃষ্টিজগতের অনু-পরমাণুকে এমনভাবে আদেশ করতে পারেন যে, তাদের আরাম-আয়েশের জন্য সবকিছু হাজির হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁরা সেটা করেন না। ক্বলবের জগতের চাবি আল্লাহ তায়ালা শুধু তাদেরকেই দেন, যারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে দুনিয়াবী লোভ লালসা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করেছেন। একারণে তারা যদি কখনো ‘অলৌকিক’ কিছু করেন, তবে সেটা নিজের স্বার্থে করেন না, বরং করেন মানবের স্বার্থে, সৃষ্টিজগতের স্বার্থে। (খাঁটি সাধু থেকে ভণ্ড সাধুকে পার্থক্য করার উপায় এটি, সত্যিকার নবী থেকে ভণ্ড দাবীদার নবীকে পার্থক্য করারও অন্যতম উপায় এটি। এবিষয়ে আমার “নবী চেনার উপায়” আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। [QR])



কিন্তু আফসোস! নাস্তিকদের মতই আমরা মুসলমানেরাও এসব কারামতকে অস্বীকার করছি; এবং শুধু তা-ই না, উপহাস পর্যন্ত করছি! যখন কোনো ওলি-আউলিয়ার কারামত সম্পর্কে শুনি, তখন আমরা উপহাস করি, এবং সেটাকে বানোয়াট গল্প বলে সাব্যস্ত করি! আমরা নিজেরা ক্বলবের জগতে বধির, বোবা ও অন্ধ, আমরা দুনিয়ায় চলছি পশুর মত জীবদেহ নিয়ে, আর অন্য সবাইকেও তেমনটাই মনে করছি!


আশরাফুল মাখলুকাত

আমরা কেন আশরাফুল মাখলুকাত? এই শ্রেষ্ঠত্ব কি আমাদের ব্রেইনের জন্য? দেখুন, আমাদের রক্তমাংসের দেহ ব্যবহার করে বস্তুজগতের উপর আমরা প্রভাব রাখি। সেটাতো পশু-পাখিও পারে! তাদেরও ব্রেইন আছে, তারাও সেটা করে। বরং কিছুক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা আরো বেশি। মৌমাছি যেভাবে মধু আহরণ করে, আমরা সেভাবে পারি না। বন-জঙ্গলের এত পশু-পাখি, সাগরতলের এত প্রাণী – এরা সবাই এমন এমন সব কাজ করে, যা আমরা মানবজাতি আমাদের কালেক্টিভ ব্রেইন দিয়ে আজ পর্যন্ত অর্জন করতে পারি নাই। তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়?

নাকি বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির পরে মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত হয়েছে, এর আগে নয়?

বরং এই শ্রেষ্ঠত্ব তো হলো আত্মার শ্রেষ্ঠত্ব। আমাদের আত্মা আছে, যেটা পশুপাখির নেই। তাদের কেবল জীবসত্ত্বা আছে, প্রাণ আছে। তাই তারা প্রাণী। কিন্তু আমাদের আত্মা আছে বলে আমরা ‘আমি’ - আমরা মানুষ। আমরা নিজেদেরকে কত সহজেই না আশরাফুল মাখলুকাত বলি! অথচ সেই শ্রেষ্ঠত্বের যে জায়গা, সেই ক্বলবের জগতে আমরা বেশিরভাগই বধির, বোবা ও অন্ধ! ঐ জায়গার অন্ধত্বের ক্ষেত্রে আমরা আস্তিক-নাস্তিক সব সমান! আমরা নামাজ-রোজা করি, ইসলাম নিয়ে তর্ক বিতর্ক করি – সবই করি ব্রেইন দিয়ে! অথচ এই ব্রেইন, এই রক্তমাংসের দেহের জামা পরিধান করার আগেও ‘আমি’ ছিলাম, এবং আমার রবের সাথে কথা বলতাম!

এই রক্তমাংসের দেহের জামা পরিধান করার পরে সেটা এমনভাবেই ভুলে গিয়েছি যে, ক্বলবের জগতকে অস্বীকার করে বসছি! দেখুন আমাদের এই দুরবস্থাই যেন আল্লাহপাক কুরআনে বলেছেন:



وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ



আর তোমরা তাদের মত হোয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের তাদের নিজেদেরকে (অর্থাৎ আপন সত্ত্বা) ভুলিয়ে দিয়েছেন। (সূরা হাশর, ৫৯:১৯)

কিন্তু কই, আমরাতো সবাই আমিত্বের অনুভূতিতে ভরপুর! স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের আমিত্বের চেতনা বরং একটু বেশিই! কিন্তু সেটা ব্রেইনের অনুভূতি মাত্র। তারা ভুলে গেছে তাদের নিজেদের আসল সত্তা, তারা ভুলে গেছে তাদের আত্মাকে। আফসোস, আমরা নামে মুসলিম, কিন্তু কাজের বেলায় আমরাও ভুলে গিয়েছি নিজেদের আত্মাকে। যদিও মুখে স্বীকার করি আত্মা বলে কিছু একটা আছে, কিন্তু আসলে সেটার স্বরূপ কেমন, তা জানি না। ক্বলবের দর্শন, শ্রবণ ও বয়ান আমাদের নেই। আমরাও নাস্তিকদের মতই বধির, বোবা ও অন্ধ। আর সেই অন্ধত্বের মধ্যে থেকেই আস্তিক-নাস্তিক করছে বিতর্ক। অথচ সবাই অন্ধ, কে কাকে পথ দেখাবে! তাই সাঁইজি বলেছেন,

এসব দেখি কানার হাট-বাজার! - লালন


আর হাজারজন কানা মিলে তর্ক বিতর্ক করেও কোনো লাভ হয় না। আমাদের বেশিরভাগ আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কই একারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দিনশেষে কেবল অহংকার বৃদ্ধি পায়, আরো বেশি অন্ধত্ব তৈরী হয়। (আধ্যাত্মিক আলো রোধকারী) পর্দার উপর পর্দা!

মসনবী শরীফে মওলানা জালালুদ্দিন রুমি “অন্ধের হাতিদর্শনের” গল্প তুলে ধরেছেন। আমরা কি বুঝতে পারি, মওলানা কোন অন্ধত্বের কথা বলেছেন? আর প্রকৃত চক্ষুষ্মান বলতে কী বুঝিয়েছেন?

_______________________________


আত্মদর্শনেই খোদাদর্শন।

“যে নিজেকে চিনেছে, সে তার রবকে চিনেছে।”


[QR]




কুরআন ও মুহাম্মদ (সা.)

________________________________________________________________


প্রসঙ্গ কুরআন: অনুভূতি ও ভাষার গুণগত পার্থক্য

কুরআন কী? তা বোঝার আগে আমাদেরকে অনুভূতি ও ভাষার পার্থক্যের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের হৃদয়ে যখন কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তখন তা আমরা ভাষায় প্রকাশ করি। অনুভব করা হৃদয়ের কাজ, আর ভাষা হলো মস্তিষ্কের কাজ। অধিকাংশ মানুষই ভাষাগত যোগ্যতা কম থাকার কারণে নিজের হৃদয়ের অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে ব্যক্ত করতে পারে না; এক কথা বলতে গিয়ে আরেক কথা বলে ফেলে। দেখুন ভাষার মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের একটি অসুবিধা:

১. আমার হৃদয়ে একটি ‘ভাব/ চেতনা/ অনুভূতি’ সৃষ্টি হলো,

২. সেটাকে ভাষায় প্রকাশ করতে গিয়ে অনুভূতিটা অনেকটাই কাটছাঁট হয়ে বদলে গেলো,

৩. তারপর আপনি যখন সেটা শুনলেন, আপনি কমবেশি শুনেছেন,

৪. সেটাকে যখন আপনি অনুভূতিতে পরিণত করেছেন, তখন সেটা আরো বদলে গিয়েছে।

অর্থাৎ, আমি অনুভব করলাম এক, বললাম আরেক, আপনি শুনলেন আরেক, বুঝলেন আরেক, আর অনুভব করলেন আরেক – শেষমেষ দেখা গেল যে, আমি যা অনুভব করেছি, আর আপনি যা অনুভব করলেন, তার মাঝে বিস্তর ফারাক! হয়ত আপনি আমাকে উল্টা ভুল বুঝে বসলেন!


“Most of problems of the world stem from linguistic mistakes and simple misunderstanding. Don’t ever take words at face value. When you step into the zone of love, language, as we know it becomes obsolete. That which cannot be put into words can only be grasped through silence.” - Shams-i-Tabrizi


কুরআন: বুদ্ধিবৃত্তি-ঊর্ধ্ব একক অনুভুতি
কুরআন নিছক একটি গ্রন্থ নয়। এটি একটি একক অনুভূতি, যা কেবল হৃদয়ই (heart - ক্বলব) পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে সক্ষম, বুদ্ধিবৃত্তি (intellect- আক্বল) নয়। এই একক অনুভূতি (কুরআন) প্রথমে নাযিল হয়েছে নবীজির (সা.) হৃদয়ে, একত্রে। এটি হলো প্রথম অবতরণ। আল্লাহপাক কুরআনে বলেন,



إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ (١)



“নিশ্চয়ই আমি একে (কুরআনকে) ক্বদরের রাতে নাযিল করেছি।” (সূরা ক্বদর, ৯৭:১)

লক্ষ্য করুন, এখানে বলা হয়েছে ‘একে’ (আনযালনাহু), অর্থাৎ গোটা কুরআনকেই, দুইটি বা পাঁচটি আয়াতকে নয়। অতএব, গোটা কুরআন একত্রে নাযিল হয়েছে লাওহে মাহফুযে (রাসুল (সা.) এর ক্বলবে), একটি একক অনুভূতি হিসেবে। অতঃপর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আল্লাহর নির্দেশে সেই অনুভূতি থেকে নবীজি (সা.) মানুষের ভাষায় প্রকাশ করেছেন। এটা হলো দ্বিতীয় অবতরণ। কুরআন অধ্যয়নের সময়ে আমরা একে সর্বনিম্ন স্তরে বন্দী হিসেবে পাই, যার মূল অনুভূতি (বা মেসেজ) অনেক উপরের বিষয়। তো, এই ভাষায় বন্দী কুরআন থেকে নবীজির অন্তরের নাযিলকৃত সেই অনুভূতির স্তরে পৌঁছা এবং কুরআনকে সেই অনুভূতির মত করে বুঝা – এটা হলো কুরআনের পথে প্রথম মে’রাজ। দ্বিতীয় মে’রাজ হতে পারে সেই অনুভূতি থেকে আল্লাহর দিকে।

কবি বলেছেন,

“তাওহীদের মুর্শিদ আমার, মুহাম্মদের নাম

ঐ নাম জপলে বুঝতে পারি, খোদায়ী কালাম।”

প্রশ্ন এসে যায়, মুহাম্মদের (সা.) নাম জপলে কুরআন বুঝবেন কিভাবে? কুরআন পড়লে না কুরআন বুঝবেন!

হ্যাঁ, কারণ কুরআন তো হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্বলবে আছে। আপনি যখন মুহাম্মদ নাম জপবেন, আপনি বাতেনী কুরআনের কাছে পৌঁছে যাবেন। আর কাগজে যেটা পান, সেটাতো জাহেরি কুরআন। যিকরে মুহাম্মদী যে কতটা শক্তিশালী, আমরা কি তা বুঝি? মুসলমানদের মাঝে যারা বেশি বেশি দরুদ ও সালামকে উৎসাহিত করেন, যিকরে মুহাম্মদী জারি রাখার জন্যে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে হয়।

নাস্তিকেরা এত কুরআন পড়েও যে তা থেকে কিছুই অর্জন করতে পারে না, এর মূল কারণ হলো তারাতো মে’রাজ করতে আসেনি। তারাতো নবীজির অন্তরে নাযিলকৃত সেই একক অকাট্য অনুভূতিতে পৌঁছানোর দুয়ার হিসেবে আরবি ভাষার এই কুরআনের কাছে আসেনি। শুধু তারা কেন, আমরা অধিকাংশ মুসলমানই কুরআনের বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে পড়ে র’য়েছি। আমরা দরজার কাছে এসে দরজার সূক্ষ্ম নকশা নিয়ে পর্যালোচনায় ব্যস্ত, অথচ বুঝতেই পারছি না যে এটা একটা দরজা! পক্ষান্তরে আধ্যাত্মিক সাধকগণ সূক্ষ্ম নকশা দেখেছেন ঠিকই, কিন্তু দরজা খুলে প্রবেশ করেছেন অপর জগতে। মে’রাজ করেছেন নবীজির হৃদয়ে। দরজার গোড়ায় পড়ে থেকে নকশার কারুকাজের আলাপ তাদের আর ভালো লাগে না, কেবলই দরজার ওপারের নেশায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে!

“Open the door of the tavern and let us go there day and night, For I am sick and tired of the mosque and seminary. ” [QR - আধ্যাত্মিক কবিতা]


কুরআনের কাছে তাই প্রতিদিন যেতে হবে। তবে কেবলমাত্র হালাল হারাম আর বিধিবিধান জানার জন্যে নয়, আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কের জন্যেও নয়, কিংবা নিজের মাযহাবকে সত্য প্রমাণের দলিল খুঁজতেও নয়। কিংবা কুরআনের ভাষাশৈলীর মুগ্ধ প্রশংসা তথা দরজার নকশার আলাপে ব্যস্ত থাকার জন্যে নয়, বরং যেতে হবে, বারেবারে কুরআনের কাছে যেতে হবে, দরজার গোড়ায় গিয়ে বসে থাকতে হবে: এই বুঝি ঘটে গেল একটা miracle, এই বুঝি দরজাটা খুলে গেল, প্রবেশ ঘটলো হৃদয়ের জগতে, আধ্যাত্মিকতায়!


কুরআনের বিনিময় মূল্য [QR- শেয়ার করতে স্ক্যান করুন]



পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহপাক বলেন,



قُلْ لا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى


“…(হে রাসুল!) বলুন, আমি এর (অর্থাৎ রিসালাতের দায়িত্ব পালনের) বিনিময়ে আমার নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো বিনিময় চাই না।…” (সূরা শূরা, ৪২:২৩)

অতএব, কুরআনের বিনিময় মূল্য হলো রাসুল (সা.) এর নিকটাত্মীয়দেরকে ভালোবাসা।

প্রশ্ন হলো, রাসুল (সা.) এর এই নিকটাত্মীয় কারা?

রাসুল (সা.) এর রক্তের আত্মীয়দের মাঝে কেউ যদি জালিম হয়ে থাকে, তবে তাকে ভালোবাসা নিশ্চয়ই কুরআনের বিনিময় মূল্য হতে পারে না। কেননা, বিনিময় মানেই হচ্ছে, দাঁড়িপাল্লার এক পাল্লায় যা রাখা হবে, অপর পাল্লার জিনিসের সাথে তার ওজন/ মর্যাদা/ গুরুত্ব সমান হবে। এমতাবস্থায় এটা কিভাবে সম্ভব যে, কুরআন এক পাল্লায় থাকবে, আর অপর পাল্লায় বিন্দুমাত্র হলেও গুনাহগার কেউ থাকবে? (আবু লাহাব তো রাসুল (সা.) এর নিকটাত্মীয় ছিল, কিন্তু তাকে ভালোবাসা কি কুরআনের বিনিময় হতে পারে?)

না, তা হতে পারে না। কুরআন একটি বিশুদ্ধ গ্রন্থ। তার সমান ওজনের জিনিসকেও অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে, এটাই বিচারবুদ্ধির দাবী।

(লক্ষ্যণীয়, অনেকে এই আয়াতের ভুল অনুবাদ করে থাকে যে, আত্মীয়দের মাঝে ভালোবাসা। কিংবা, আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্য। যার একটিও সঠিক নয়।)

এখন, রাসুল (সা.) এর রক্তের সম্পর্কের মাঝে নিষ্পাপ কারা, এটা আমাদের জানতে হবে। সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,



إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا (٣٣)



"..হে (রাসুলের) আহলে বাইত! আল্লাহ তোমাদের থেকে অপকৃষ্টতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূতপবিত্র করতে চান।” (সূরা আহযাব, ৩৩:৩৩)

আর এই আহলে বাইত কারা? সহীহ মুসলিমসহ আরো বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের সূত্রে জানা যায় যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন হলো এই আহলে বাইত। [QR -আহলে বাইত কারা?]



এক্ষেত্রেও একটি ভ্রান্ত ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। আর তা হলো, “আহলে বাইত মানে ঘরের মানুষ। আর রাসুল (সা.) এর ঘরের মানুষ হলেন তাঁর স্ত্রীগণ। অতএব, এখানে রাসুল (সা.) এর স্ত্রীগণকে বুঝানো হয়েছে।”

কিন্তু লক্ষ্য করুন, আরবী ভাষারীতি অনুযায়ী female-majority গ্রুপের ক্ষেত্রে ‘কুন্না’ (كُنَّ) ও male-majority গ্রুপের ক্ষেত্রে ‘কুম’ (كُم) সর্বনাম ব্যবহৃত হয়। একই সূরার ২৮ নং আয়াত থেকে নবীর স্ত্রীগণের সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে ৩৩ নং আয়াতের শুরু পর্যন্ত, এবং সর্বদা স্ত্রীবাচক সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি ৩৩:৩৩ আয়াতে যখন রাসুল (সা.) এর স্ত্রীগণের জন্য গৃহে অবস্থানের আদেশ জারি করা হয়েছে, সেখানে বুয়ুতিকুন্না [ بُيُوتِكُنَّ - (female-majority) তোমাদের গৃহসমূহ] বলা হয়েছে। লক্ষ্য করুন, সেখানে ‘কুন্না’ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যখন আহলে বাইতের পবিত্রতার কথা বলা হলো, তখন আনকুম [ عَنْكُمُ - (male-majority) তোমাদের থেকে] বলা হয়েছে। লক্ষ্য করুন, হঠাত করেই সেখানে ‘কুম’ সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হলো, এই বাক্যে আহলে বাইত বলতে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে, তারা male-majority (আলী-হাসান-হুসাইন - ৩ জন পুরুষ, ফাতেমা - ১ জন নারী)। [QR - রাসুলের (সা.) পরিবারই নেতৃত্বের হক্বদার]



উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, আহলে বাইত তথা আলী-ফাতেমা-হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসা হলো কুরআনের বিনিময়। যারা এই চার নিষ্পাপ ব্যক্তিকে ভালোবাসবে, তারাই কুরআনের মূল্য পরিশোধকারী। কুরআন তাদের জন্যেই হেদায়েত গ্রন্থ। তাদেরই কুরআনভিত্তিক আমল যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ময়দানে তোলা হবে। পক্ষান্তরে যারা আহলে বাইতকে ভালোবাসেনি, ভালোবাসেনা, তাদের যত আমলই থাকুক না কেন, যত বড় মাদানী আর শায়খই হোক না কেন, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ময়দানেই তোলা হবে না। কেননা, চুরি করা জিনিসের উপর ইবাদত কবুল হয় না।


চুরি করা গরু দিয়ে কুরবানি হয় না,

ডাকাতির টাকায় হজ্জ্ব করলে তা কবুল হয় না,

চুরির টাকা দিয়ে যাকাত দিলে তা কবুল হয় না --

এমতাবস্থায় এটা কিভাবে সম্ভব যে, কুরআনকে চুরি করে তারপর কুরআনভিত্তিক আমল করলে তা গ্রহণ হবে? এই কুরআন তো বিনামূল্যের জিনিস নয়; এর তো বিনিময় মূল্য আছে যা আল্লাহপাকের আদেশক্রমে রাসুল (সা.) স্বয়ং দাবী করেছেন। দোকান থেকে এক বাক্স চকলেট এনে তার যদি মূল্য পরিশোধ না করেন, তবে ঐ চকলেট খাওয়া আপনার জন্য হারাম তো বটেই, বরং আল্লাহর অভিশাপে পেট খারাপও হতে পারে।

ঠিক তেমনি মুসলিম জাতির ইতিহাসে যারা রাসুল (সা.) এর নিকটাত্মীয়দেরকে ভালোবাসেনি, তারা যতই কুরআনভিত্তিক আমল করুক না কেন, তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। এসব ব্যক্তিদের জন্য বরং কুরআন হবে পথভ্রষ্ট হবার উছিলা। ISIS-ও এদের ভিতর থেকেই বের হবে।

অতএব, রাসুল (সা.) এর রক্তের আত্মীয়দেরকে ভালোবাসা হলো কুরআনের বিনিময় মূল্য। যারা এই মূল্য পরিশোধ করেনি, তারা আপনাকে কী ইসলাম শিক্ষা দেবে বলুন? এমনকি আমাদেরকে জানায়ওনি যে, এই কুরআনের বিনিময় মূল্য আছে? আর সেটা পরিশোধের উপায়ই বা কী? বেশিরভাগ মানুষ তো নবীর ক্বুরবাকে (নিকটাত্মীয়দেরকে) চেনেই না!

আর যারা রাসুলের (সা,) নিষ্পাপ নিকটাত্মীয়গণের শত্রু, তারা এই আয়াতের বিকৃত অনুবাদ করেছে, ঠিক যেভাবে ইমাম শব্দের অনুবাদ করেছে আমলনামা, সেভাবে বিকৃত অনুবাদ করেছে যে: “আত্মীয়তাজনিক সৌহার্দ্য চাই”। রাসুল (সা.) কোন হিসাবে আমাদের আত্মীয়??


তো প্রিয় পাঠক!

যারা কুরআনের মূল্যই পরিশোধ করেনি, তাদের থেকে কী কুরআন আপনি শিখবেন বলে মনে করেন? কুরআন কি তাদের সামনে আপন সৌন্দর্য প্রকাশ করবে? কখনোই না। তা তারা যত বড় শায়খ, মাদানী, আর মুফাস্সিরে কুরআন খেতাবধারীই হোক না কেন।

চুরি করে হয়েছে মুসলমান

কিতাব মুখস্থ পাহাড় সমান

দাড়ি টুপি আর জোব্বার ভাঁজে

ছিনতাই হলো কুরআন।


প্রিয় পাঠক!

ইতিহাসের মেজরিটি মুসলমানই আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরেনি, রাসুল (সা.) এর জীবনেতিহাস (সীরাত) ও কথা-কর্ম (হাদীস) আহলে বাইত এর নিকট থেকে গ্রহণ করেনি, অথচ এই আহলে বাইত (আলী-ফাতেমা-হাসান-হুসাইন) হলেন কুরআনের বিনিময়, রাসুলের (সা.) নিষ্পাপ ক্বুরবা (নিকটাত্মীয়)। এমনকি রাসুল (সা.) নিজে আলাদাভাবে “কুরআন ও আহলে বাইতকে” আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন:

“আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, অপরটি হচ্ছে আমার রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়, আমার আহলে বাইত। তোমরা যদি এ দুটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।” (সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযি, সুনানে ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, তাফসির ইবনে কাসিরসহ বহু গ্রন্থে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হাদীস)

এবার নিজেই একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে দেখুন, যারা গোটা কুরআনেরই বিনিময় মূল্য, কুরআনের সমান যাদের ওজন, যাদেরকে ভালোবাসা ফরজ, রাসুল (সা.) নিজে আলাদাভাবে যাদেরকে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন -- সেই আহলে বাইত তথা আলী-ফাতেমা-হাসান-হুসাইন এর থেকে বর্ণিত কয়টা হাদীস আপনি পেয়েছেন? নাকি সেই আলী-ফাতেমা-হাসান-হুসাইনকে যারা শহীদ করেছে, সেইসব নামধারী মুসলিমদের হাতে বিকৃত ইতিহাস ও তাদের ফিল্টার দিয়ে ফিল্টার হয়ে আসা হাদীসই আজ আপনার-আমার বাসায় ‘সহীহ’ হয়ে উঠেছে? প্রিয় পাঠক! আপনার নিরপেক্ষ মনের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। [QR - এবিষয়ে লেখক-পাঠক আলোচনা করতে স্ক্যান করুন]



আমি আশা করব, প্রিয় পাঠক, অন্ততঃ আপনি-আমি যেন কুরআনের মুল্য পরিশোধ করার চেষ্টায় সদা রত থাকি। আর সেটা কেবল মুখে “ভালোবাসি” বলার মাধ্যমে নয়, বরং তাঁদেরকে অনুসরণের মাধ্যমেই এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। অতএব, ইসলামের সকল শরীয়ত ও মারেফত তাঁদের কাছ থেকেই শিক্ষা করুন। যারা রাসুলের (সা.) রক্তের আত্মীয়দের থেকে ইসলাম শিক্ষা করে না, বরং অন্যত্র তা সন্ধান করে, তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। তারা কুরআনের মূল্য পরিশোধ করেনি, ফলে কুরআনের স্বরূপ তাদের সামনে উন্মোচিত হয়নি। ডাক্তার ইনজেকশান দেবার আগে যেমন জায়গাটিকে অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে জীবানুমুক্ত করে নেয়, তেমনি কুরআনের ইনজেকশান নেবার আগে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে হৃদয় ও মনকে ধৌত করতে হবে। তবেই কেবল কুরআন উপকারী হবে। তা না হলে অপরিষ্কার ত্বকে ইনজেকশান পুশ করলে যেমন ইনফেকশান হয়, তেমনি প্রেম-ভালোবাসাহীন মানুষ কুরআন পড়লে আইসিস জন্ম নেবে, জন্ম নিয়েছে।


কুরআনে নাসেখ-মানসুখ

নাসেখ শব্দের অর্থ “রহিতকারী”, আর মানসুখ অর্থ “যে রহিত হয়েছে”। কুরআনের এক আয়াত দ্বারা আরেক আয়াতকে রহিত করার এই ভ্রান্ত ধারণাটি মুসলমানদের মাঝে তৈরী হয়েছে (বাহ্যিকভাবে) পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন আয়াতের সামঞ্জস্য খুঁজে না পেয়ে। কিন্তু আসলে কুরআনের অভ্যন্তরে নাসেখ (রহিতকারী) ও মানসুখ (যা রহিত হয়েছে) ধারণাটি গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কিভাবে সম্ভব যে, যে কিতাব চিরস্থায়ী হবে, তাতে কিছু অস্থায়ী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হবে? এবং সুস্পষ্ট ভাষায় বলেও দেয়া হবে না যে, এই অস্থায়ী বিধানের মেয়াদ কতদিন? তবে কি কুরআন কালোত্তীর্ণ গ্রন্থ নয়? সময়ের সাথে সাথে কি তার বিভিন্ন বিধান অকেজো হয়ে পড়ে(ছে)?

না, প্রিয় পাঠক। সেটি সম্ভব নয়। বরং আল্লাহপাক কুরআনে বলেন,



مَا نَنْسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِنْهَا أَوْ مِثْلِهَا أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (١٠٦)


“আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা ভুলিয়ে দিলে তার চেয়ে উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?” (সূরা বাকারা, ২:১০৬)

আর এই রহিতকরণ কিংবা আপগ্রেড (“তার চেয়ে উত্তম অথবা সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন”) হলো পূর্ববর্তী কিতাবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আসলে আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত কোনো কিতাবই মানুষ গুম করে ফেলতে পারেনি, বরং সবসময় পূর্ববর্তী কিতাবের বিষয় পরবর্তী কিতাবে হুবহু কিংবা আপগ্রেডেড ভার্সন হিসেবে সন্নিবেশিত হয়ে গিয়েছে। এবং এইভাবে করে সর্বশেষ আপডেটেড কিতাব হলো কুরআন, যাতে পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থই আছে, তবে পরিবর্তিত রূপে। আর তাই আমরা যখন বলি যে, “আমরা ঈমান এনেছি ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানদের উপর যাকিছু নাযিল হয়েছে তার উপর, এবং যাকিছু পেয়েছেন মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবী-রাসুলগণ তাঁদের রবের নিকট থেকে” – তখন আসলে আমরা এটা বুঝাই না যে ঐ সকল কিতাব পড়ে আমরা সেগুলি আঁকড়ে ধরে নিজেদেরকে নিরাপদ করেছি (তথা ঈমান এনেছি), বরং আমরা বুঝাই যে, কুরআনের মাঝেই সেইসকল কিতাব সন্নিবেশিত আছে। আর কুরআনকে আঁকড়ে ধরে সে অনুযায়ী আমল করে নিজেকে নিরাপদ করা তথা ঈমান আনার মাধ্যমে আমরা পূর্ববর্তী সকল কিতাবের উপরেই ঈমান আনছি।

কুরআনে নাসেখ-মানসুখ এর কয়েকটি প্রচলিত উদাহরণ বিদ্যমান, যা আসলে সঠিকভাবে বুঝতে না পারার ফলে ঘটেছে। মদ হারাম হওয়া সংক্রান্ত যে উদাহরণটি দেয়া হয়ে থাকে, তা দেখুন:


নাসেখ-মানসুখ এর পক্ষের যুক্তি:

১ম ধাপ, মদকে নিরুৎসাহিত করা:



يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا




“(হে রাসূল!) তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ আর মানুষের জন্যে বিভিন্ন উপকারিতাও, কিন্তু এতদুভয়ের পাপ এতদুভয়ের উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (সূরা বাকারা, ২:২১৯)

২য় ধাপ, নামাজের সময়ে মদকে নিষিদ্ধ করা:



يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَقْرَبُوا الصَّلاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى


“হে ঈমানদারগণ! আচ্ছন্ন অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না…।” (সূরা নিসা, ৪:৪৩)

৩য় ধাপ, সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ করা:



يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأنْصَابُ وَالأزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (٩٠)

হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সূরা মায়েদা, ৫:৯০)

এবং এই সর্বশেষ আয়াত দ্বারা আগের আয়াতগুলি রহিত (মানসুখ) হয়ে গিয়েছে, কেননা আগে শুধু নামাজের সময় মদ নিষিদ্ধ ছিল, এখন সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ হয়ে গেল।

অথচ পাঠক, একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে, মদ ধাপে ধাপে হারাম হওয়া ও সংশ্লিষ্ট আয়াতের নাসেখ-মানসুখ হলো কুরআনের আয়াতকে ভুল বোঝার ফল। আল্লাহপাক নেশাগ্রস্ত (আচ্ছন্ন) অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করছেন, এর মানে কি অন্য সময় নেশা করার বৈধতা দিচ্ছেন? নিশ্চয়ই না!

ধরুন, আপনার ছেলের একটি মোটরবাইক আছে, এবং সে সিগারেট খায়, আপনি তা জানেন। আপনি যদি তাকে বলেন, “বাবা, বাইকে তেল তোলার সময় পেট্রোল পাম্পের ভিতরে তো নয়ই, ধারেকাছেও স্মোক করবি না।” কারণ এতে অগ্নিকাণ্ড ঘটার আশঙ্কা আছে। এর মানে কি আপনি অন্য সময় সিগারেট খাবার বৈধতা দিচ্ছেন? নিশ্চয়ই না!

বরং সিগারেট খাওয়া তো আপনার দিক থেকে সবসময়ই নিষেধ, কিন্তু ছেলেতো নিষেধ মানছে না, এমতাবস্থায় পেট্রোল পাম্পের ভিতরে যেন স্মোক না করে, আপনি সেই উপদেশ দিচ্ছেন। কেননা, এতে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি মদ ক্ষতিকর ও মহাপাপ জেনেও যখন মুসলমানদের কেউ কেউ মদ খেয়েই যাচ্ছে, আবার নামাজের সময় নামাজও পড়তে আসছে, তখন তাদেরকে নামাজ নষ্ট হওয়ার মহা ক্ষতি থেকে আল্লাহপাক সতর্ক করছেন: নেশাগ্রস্ত (আচ্ছন্ন) অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তীও হ’য়ো না…

কেননা, অন্য সময় মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকলে এতটা ক্ষতি নাই, কিন্তু যদি এই নেশাগ্রস্ত অবস্থাটা নামাজের সময় বিদ্যমান থাকে, তাহলেতো নামাজটা পুরোই নষ্ট হলো। আর এক ওয়াক্ত নামাজ নষ্ট হওয়া অনেক বড় ক্ষতি। এবং দেখুন একই আয়াতে আল্লাহপাক কারণটাও বলে দিচ্ছেন যে, “... যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা যা বল তা বুঝতে পারো।”

অর্থাৎ, তোমরা তো কথা শুনছো না, নেশা করেই যাচ্ছো, কিন্তু অন্ততঃ নেশার ঘোর থাকা পর্যন্ত নামাজের কাছেও যেও না, ঘোর কেটে গেলে তখন নামাজে দাঁড়াও, কারণ ঘোরলাগা অবস্থায় নামাজ পড়লে নামাজটাই নষ্ট হবে, আর এক ওয়াক্ত নামাজ নষ্ট হওয়াটাই মহা ক্ষতি।

ঠিক যেভাবে বাবা সন্তানকে বলেন যে, সিগারেট খেতে নিষেধ করেছি, কিন্তু কথা তো শোনো না, অন্ততঃ পেট্রোল পাম্পের ভিতরে স্মোক ক’রো না, কেননা এতে মহা ক্ষতি হবে।

অর্থাৎ, এখানে কোনো আয়াত রহিত হয়নি। সবচে’ বড় কথা, আল্লাহপাক যদি রহিতই করবেন, কেন তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় তা বলবেন না যে পূর্বের ওমুক বিধান রহিত করা হলো? এছাড়াও, খোদার ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে মদ “ধাপে ধাপে হারাম হওয়ার“ বিষয়টি গ্রহণযোগ্যও নয়। মদ ছাড়া কি শুধু তৎকালে সাহাবীদের জন্যই কঠিন, আজকের নওমুসলিমদেরজ জন্য কঠিন নয়? খোদার ন্যায়বিচারের স্বার্থে তো কুরআনে তাহলে এভাবেই বলা উচিত যে, মদ এত মাসে ধাপে ধাপে ছাড়ার সুযোগ দেয়া হলো? ঠিক যেভাবে বাচ্চার দুধ ছাড়ানোর সময় বলে দেয়া হয়েছে!


মৃত ও জীবিত কুরআন

মানুষ আর বইয়ের পার্থক্য কী? যে ব্যক্তি মানুষটাকেই পেয়ে গেছে, তার আর আলাদাভাবে কিতাব পড়তে হয় না।

রাসুল (সা.) যখন বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেন যে, "আমি তোমাদের মাঝে দুটি ওজনদার বস্তু রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এ দুটি আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না -- তার প্রথমটি হলো কুরআন, আর দ্বিতীয়টি হলো আমার আহলে বাইত।" --

তখন কুরআনকে তিনি কিভাবে রেখে গিয়েছিলেন? সোয়া লক্ষ সাহাবীর ঘরে ঘরে কি কাগজের "বই" রেখে গিয়েছিলেন? নাকি কিছু বিশুদ্ধ মানুষের হৃদয়ে কুরআন রেখে গিয়েছিলেন? আর সেই বিশুদ্ধ মানুষদেরকেই আঁকড়ে ধরতে বলেছেন?

নিশ্চয়ই আল্লাহপাক নির্বাক, মৃত কিতাবের চেয়ে সবাক, জিন্দা কুরআনকে অধিকতর পছন্দ করেন! আজকাল আমরা মুসলমানেরা যে কাগজের বই পড়ে পড়ে তর্ক বিতর্ক করে শিরক/ বিদাত/ সহীহ ইত্যাদি বের করার চেষ্টা করছি --

আল্লাহ তায়ালা কেন ১৪০০ বছর আগে তেমনি কিছু কাগজের বই আকাশ থেকে নাযিল করলেন না? আরবরা সেই বই নিজে নিজে পড়ে বুঝে খাঁটি মুসলমান হয়ে যেত? আর এমন তো না যে, সেযুগে কাগজ কলম ছিল না!

বরং আমাদের দেখতে হবে যে, আল্লাহপাক "মানুষ" প্রেরণ করেছেন: মুহাম্মদ (সা.), ঈসা (আ.), মূসা (আ.)…। "কিতাব" হলো তাঁদের মুখনিঃসৃত কিছু বিশেষ কথা: কাগজের বই নয়।

একজন বক্তা যখন সরাসরি কথা বলেন, আর যখন সেটা কাগজে লেখা থাকে -- দুটোর প্রভাব সমান নয়। প্রথম যুগের মুসলমানদের ভিতরে কিভাবে এত খাঁটি ও সোনার মানুষ তৈরী হয়েছিল?

কারণ তারা কুরআন পড়েছিলেন জিন্দা কুরআন, সবাক কুরআন। মৃত, নির্জীব কাগজের কিতাব নয়।

গোটা কুরআন অর্থসহ বুঝে পড়ার ইচ্ছা অনেকেরই। কারো হয়ত দ্বিতীয়/ তৃতীয়বার, কারো বা এবারই প্রথম। কিন্তু আমার প্রশ্ন: কিভাবে আপনি এই কিতাবটি পড়তে চান?

দর্শনশাস্ত্রে বলে, এক জিনিস কখনো আরেক জিনিসের হুবহু প্রতিস্থাপক (রিপ্লেসমেন্ট) হয় না। যদি হতই, তবে আর সেই দুটো ভিন্ন জিনিস হত না, একটি জিনিসই হত। নিশ্চয়ই সরাসরি রাসুল (সা.) এর কাছে কুরআন শোনা, কিংবা যাঁদেরকে তিনি আঁকড়ে ধরতে বলেছেন, সেই পবিত্র আহলে বাইতের কাছে কুরআন শোনা আর আপনার-আমার কাগজের কুরআন পড়া এক নয়! নিশ্চয়ই দুটোর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সমান নয়।

কাগজের বইয়ে কুরআন তো অনেক পড়লেন, এইবারটি একটু জিন্দা কুরআন পড়ে দেখবেন কি? এমন কোনো মানুষ, যার ভিতরে গোটা কুরআন জারি আছে: যার প্রতিটা কথা, কর্ম, আচরণই হলো কুরআনের বহিঃপ্রকাশ! সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শোনার মত যার চেহারার দিকে তাকালেই আত্মশুদ্ধি ঘটে, আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে? [QR - শেইখ আহমেদ দিদাতের অভিজ্ঞতায় জিন্দা কুরআন।]



আমার অনুরোধ, প্রিয় পাঠক! জীবনে একবার হলেও এই পথে হেঁটে দেখুন। কাগজের কুরআন তো আছেই; আপনার হারাবার কিছু নেই, বরং আল্লাহ ইচ্ছা করলে পাবার অনেক কিছুই আছে।


প্রিয় পাঠক!

ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে, নবীজি (সা.) এর তেলাওয়াত তারা চুরি করে শুনতে আসত, তারপর একজন আরেকজনের কাছে ধরা পড়ে যেত। সেই একই কুরআন তো আমরাও পড়ছি, কিন্তু আমাদের কী হলো? আমাদের কুরআন পাঠ কেউ শুনতে আসে না কেন? আফসোস! কারণ আমরা মৃত, আর আমাদের হাতেও তাই কুরআন মৃত হয়ে আছে। বর্শার আগায় মৃত কুরআন নিয়ে যারা জিন্দা কুরআনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, সেই তারাই আজও আমাদেরকে জিন্দা কুরআন থেকে আমাদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।


হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন নূর।

রাসুল (সা.) নূরের তৈরী, নাকি মাটির তৈরী -- এটা আমাদের মুসলিম সমাজে সুপরিচিত বিতর্ক। এবিষয়ে দেখুন কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেন,



قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ (١٥)



“…তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নূর ও একটি সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।” (সূরা মায়েদা, ৫:১৫)

এই আয়াতে আল্লাহপাক রাসুল (সা.)-কে নূর বলেছেন। আর আত্মদর্শন অধ্যায়ে সংক্ষেপে বলেছি যে, রক্তমাংসের এই দেহ একটি জামা মাত্র, আসল মানুষ হলো তার ব্যক্তিসত্তা, নাফস, আত্মা। রাসুল (সা.) এর ব্যক্তিসত্তা, আমাদের ব্যক্তিসত্তা থেকে ভিন্ন। তাঁর ব্যক্তিসত্তা হলো নূর। তিনি নূর। তবে এর সাথে তিনি যে রক্তমাংসের জামা পরিধান করেছিলেন আমাদের মতই, তার কোনো বিরোধ নেই। কুরআনে আল্লাহপাক বলেন,



قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ



“বলুন, আমিও তোমাদের মতই বাশার (রক্তমাংসের মানুষ)।” (সূরা কাহফ, ১৮:১১০)

অতএব, রক্তমাংসের দেহের বিচারে তিনিও আমাদের মতই মানুষ। কিন্তু ব্যক্তিসত্তা তথা নাফসের বিচারে তিনি আমাদের থেকে ভিন্ন, তিনি নূর। যখন একজন শিক্ষক একইসাথে ক্লাসটিচার ও প্রিন্সিপাল হন, তখন তাকে শুধু ক্লাসটিচার বলা হয় না, বরং তাঁকে তাঁর সর্বোচ্চ পদ দিয়ে সম্বোধন করা হয়, তাঁকে প্রিন্সিপাল-ই বলা হয়। একই কারণে রাসুল (সা.)-কে যারা নূরনবী বলে, তারা উপযুক্ত মর্যাদা সহকারে তাঁর নাম উচ্চারণ করে। আসলে নূরের তৈরী বললেও তা কম হয়, ভুলও হয়, বরং বলা উচিত – তিনি নূর, নূরনবী!


নবী (সা.) দেখেন ও শোনেন।



وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا (٣٠)


“এবং (তখন কেয়ামতের দিনে) রাসুল বলবেন, হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমার লোকেরা এই কুরআনকে পরিত্যক্ত করে রেখেছিল।” (সূরা ফুরক্বান, ২৫:৩০)

অর্থাৎ, রাসুল (সা.) এর মৃত্যুর পরে আমরা মুসলিম জাতি যে কুরআনকে পরিত্যাগ করেছি, মেজরিটি মুসলিম গোটা কুরআন একবারও অর্থসহ পড়ে দেখেনি – এই অবস্থা রাসুল (সা.) এখনও দেখতেছেন। এবং তিনি এটা আল্লাহ তায়ালার কাছে অভিযোগ করবেন!

সূরা হজ্জ এর ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, মুহাম্মদ (সা.) হবেন উম্মতের সাক্ষী। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, চোখে না দেখলে কি সে সাক্ষী হয়? নাকি রাসুল (সা.) মাত্র কয়েক বছরে যে মুসলমানদেরকে পেয়েছেন, তাদের সাক্ষী, বাকী কোটি কোটি মুসলিমের সাক্ষী ননা? নাকি আল্লাহপাক রাসুল (সা.) কে আগে জানাবেন, তারপর তিনি সাক্ষ্য দেবেন? তাহলে সেটাকে কি সাক্ষী বলে, নাকি সাজানো নাটক বলে?



বরং রাসুল (সা.) আমাদের কথা-কর্ম দেখছেন। আমাদের আমলের উপর তিনি নজর রাখছেন। আমরা যে কুরআনের সাথে খারাপ আচরণ করব, তা তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, আল্লাহপাক সেটা কুরআনে বলে দিয়েছেন। রাসুল (সা.)-ও এ ব্যাপারে সতর্ক করে গিয়েছিলেন গাদীরে খুমের ভাষণে–

“আমি তোমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব, এতে হিদায়াত ও নূর রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন করো, একে শক্ত করে ধরে রাখো। আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।”

রাসুল (সা.) কুরআনকে ও আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরতে আদেশ করেছেন, এবং এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। কুরআনের সাথে আমরা মুসলিম উম্মাহ কী আচরণ করেছি ও করছি, তাতো সবার জানা। আর রাসুল (সা.) এর আহলে বাইতকেও মুসলমানরাই হত্যা করেছে, কাফির-মুশরিকরা নয়। আফসোস!


মুহাম্মদের (সা.) যিকর সার্বক্ষণিক জারি আছে

আহমাদ অর্থ প্রশংসিত। আল্লাহপাক বলেন,



وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ (٤)



এবং আমি কি আপনার যিকরকে সমুন্নত করিনি? (সূরা ইনশিরাহ, ৯৪:৪)


এর ভুল ব্যাখ্যা যেটা প্রচলিত আছে তা হলো, সারা বিশ্বের সকল মসজিদের মিনার ও মিম্বর থেকে আল্লাহর নামের সাথে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম উচ্চারণ করা হয়।

অথচ যখন এই আয়াত নাজিল হয়, তখন কি এই চিত্র ছিল? এছাড়াও, এটা কিভাবে সম্ভব যে, তাঁর হাবীবের যিকর মানুষের উপর নির্ভরশীল হবে? না, তা হতে পারে না। বরং দেখুন –



إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (٥٦)


উচ্চারণ: ইন্নাল্লহা ওয়া মালাইকাতাহু ইয়ুসল্লুনা আলান্নাবিয়্যি, ইয়া আয়্যুহাল্লাযিনা আমানু, সল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা। অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীকে সালাত করে থাকেন, অতএব যে ঈমানদারগণ, তোমরাও তাঁকে সালাত করো এবং উপযুক্তভাবে (সম্মান সহকারে) সালাম দাও।” (সূরা আহযাব, ৩৩:৫৬)

আর তাই আমরা দরুদ পাঠ করি: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলে মুহাম্মদ। ২৪ ঘন্টায় মোট ৫ বার আজানে নবীর নাম নেয়া হয়, এবং ৫টি নামাজে নবীর নাম নেয়া হয়। এটাই যদি হবে, তবে তা খুবই কম! ২০০ কোটি মুসলমানের সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেও তা খুবই কম। আর যখন এই আয়াত নাযিল হয়? তখনতো এত মুসলমানও ছিল না! তাহলে কি মুসলমানের সংখ্যা বাড়া-কমার সাথে সাথে আল্লাহর ঐ আয়াতের ব্যাসকম হয়?

বরং এগুলি সবই ভুল ব্যাখ্যা। আসলে আল্লাহ নিজে মুহাম্মদের (সা.) যিকরে সদা রত আছেন।

আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দরুদ পড়ি। এর বাইরেও দরুদ ও সালাম পেশ করতে হবে। কিন্তু আল্লাহ কয়বার তাঁর হাবীবকে সালাওয়াত করেন? দিনে ১০০ বার? ২০০ বার? নিশ্চয়ই না! আল্লাহ তায়ালা সময়ের অধীন নন। তিনি অসীম, অনন্ত, true infinity. তিনি সালাওয়াত করেন। অর্থাৎ, গোটা সৃষ্টিজগতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসা জারি আছে। সার্বক্ষণিক। চিন্তা করতে পারেন? নিজেকে এর সাথে সংযুক্ত করতে ইচ্ছা করে না কি?

এই যিকরে সংযুক্ত না হলেতো কুরআনের দুয়ার খুলবে না। এবার আপনিই বলুন, যাদেরকে নামাজের বাইরে আলাদাভাবে দরুদ পড়তে দেখা যায় না, উল্টা দরুদ ও সালামের আসরকে যারা বিদাত ইত্যাদি নানান আখ্যা দিয়ে এই যিকর থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করছে, তারা কি সত্যিই দায়ী ইলাল্লাহ, নাকি দায়ী ইলাশাইত্বন?


যুক্তির বিচারে নবীর অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য

প্রিয় পাঠক! “নিরপেক্ষ স্রষ্টাভাবনা”-র মতনই এটি একটি আলাদা ও বিস্তারিত আলোচনার বিষয়। এবিষয়ে পাশের QR কোডটি স্ক্যান করে আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ করছি। তবে এখানে কেবল নিচের আয়াতটুকু বলে যাব:



যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। (সূরা নমল, ২৭:১৮)

সোলাইমান (আ.) এর এই ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, এমনকি পিঁপড়াও জানে যে, আল্লাহর নবী কারো উপর জুলুম করতে পারেন না। অথচ যারা দয়াল নবীজির (সা.) নামে বানোয়াট গল্প তৈরী করেছে, তারপর সেগুলিকে সহীহ হাদীস নামে চালিয়ে দিয়েছে ও বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে, তারা আসলে নবী কি জিনিস, তা-ই জানে না। শয়তানের এজেন্টরা ইসলাম প্রচারক সেজে নবী মুহাম্মদ (সা.) কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, আর সেই বিকৃত উপস্থাপনা দেখে অমুসলিমেরা মুহাম্মদী নূর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে যিকরে মুহাম্মদী থেকে।


‘মুহাম্মদ’ নামের ওজন

আমরা খুব সহজেই মুখ দিয়ে উচ্চারণ করি: হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এমনকি তর্ক বিতর্ক করি তাঁকে নিয়ে। অথচ আমরা কি অনুভব করতে পারি, আমরা কার নাম উচ্চারণ করছি? এই নাম উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের চোখ অশ্রুসজল হয়ে যাবার কথা, আমাদের হৃদয় নম্র হয়ে ওঠার কথা। অথচ তা হয় না, আফসোস! কারণ আমরা মুহাম্মদের যিকরের সাথে সংযুক্ত নই। আমরা জানি না, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আসলে ‘কে’ বা ‘কী’। আমরা সালাত করি আল্লাহকে, আল্লাহ সালাত করেন মুহাম্মদকে। এবং আমাদের নাপাক জবান দিয়ে আমরা নিজেরা সরাসরি সালাত করি না, আমরা বলি: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ… অর্থাৎ, হে আল্লাহ, ‘আপনি’ সালাত করুন মুহাম্মদের উপর ও তাঁর বংশের উপর…

অর্থাৎ, এটা আল্লাহ তাঁর নিজের জন্য এক্সক্লুসিভ রেখেছেন। আল্লাহ পাক আহমদ নামে কাকে প্রেম নিবেদন করেন, আমরা যদি অনুভব করতে পারতাম, তবে আমাদের বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে যেত!

_______________________________


মূল কুরআন একটি ‘ভাব’, যাকে আমরা আরবি ভাষায় জাহেরী রূপে পাই।

এই কুরআনের বিনিময় হলো রাসুলের (সা.) আহলে বাইতকে ভালবাসা।

কুরআনের পাশাপাশি আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরা (অনুসরণ করা) নবীজীর আদেশ।


যে মুসলিম আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কে অত্যন্ত যুক্তিবাদী ও নিরপেক্ষ, ইসলাম-জগতের ভিতরে তার অনুরূপ নিরপেক্ষতার চর্চা হয় কি? “কুরআন ও আহলে বাইত” আলোচনায় অংশ নিন


মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক জনপ্রিয়

স্রষ্টাভাবনা

প্রথম ভাগ: দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা  | | পর্ব-১: উৎসের সন্ধানে উৎসের সন্ধান করা মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। মানুষ তার আশেপাশের জিনিসের উৎস জানতে চায়। কোথাও পিঁপড়ার লাইন দেখলে সেই লাইন ধরে এগিয়ে গিয়ে পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বের করে। নাকে সুঘ্রাণ ভেসে এলে তার উৎস খোঁজে। অপরিচিত কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী কিংবা যেকোনো অচেনা জিনিস দেখলে চিন্তা করে – কোথা থেকে এলো? কোথাও কোনো সুন্দর আর্টওয়ার্ক দেখলে অচেনা শিল্পীর প্রশংসা করে। আকাশের বজ্রপাত, বৃষ্টি, রংধনু কিংবা সাগরতলের অচেনা জগৎ নিয়েও মানুষ চিন্তা করে। এমনকি ছোট শিশু, যে হয়তো কথাই বলতে শেখেনি, সে-ও কোনো শব্দ শুনলে তার উৎসের দিকে মাথা ঘুরায়। অর্থাৎ, মানুষ জন্মগতভাবেই কৌতুহলপ্রবণ। একটা বাচ্চা জ্ঞান হবার পর চিন্তা করে – আমি কোথা থেকে এলাম? আরো বড় হবার পর চিন্তা করে – আমার মা কোথা থেকে এলো? এমনি করে একসময় ভাবে, পৃথিবীর প্রথম মা ও প্রথম বাবা, অর্থাৎ আদি পিতা-মাতা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? চারিদিকের গাছপালা, প্রকৃতি, পশুপাখি, গ্রহ-নক্ষত্র-মহাবিশ্ব – এগুলিরই বা সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন উৎসুক মনে খেলে যায়। তখনই শুরু হয় সমস্যা। নির

খোদার ন্যায়বিচার | অনন্তের পথে

আগের পর্ব: আল্লাহ কেন পথভ্রষ্ট করেন? | সূচীপত্র দেখুন প্রশ্ন: এমনও অনেকে আছে, যারা ইসলামের নামও শোনেনি, যাদের কাছে কুরআন পৌঁছায় নাই, তাদের কী হবে? তারা কেন জাহান্নামে যাবে? তাদের কী দোষ? কোথায় খোদার ন্যায়বিচার? নাস্তিকদের একটা কমন প্রশ্ন এটা। এবং প্রশ্নটা অবশ্যই অত্যন্ত যৌক্তিক। কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মুসলমানই ইসলামকে যৌক্তিক ও দার্শনিক মানদণ্ডে যাচাই করে তারপর সত্য হিসেবে গ্রহণ করে মানে না, বরং তারা মানে বাপ-দাদার ধর্ম হিসেবে, (অন্ধ)বিশ্বাসের বস্তু হিসেবে। আর তাই এসকল প্রশ্নের যৌক্তিক সত্য জবাবও তারা দিতে পারেন না। দেবেনই বা কিভাবে, নিজেই তো জানেন না! উপরন্তু নিজের (অন্ধ)বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য গোঁজামিলে পরিপূর্ণ ভুলভাল ব্যাখ্যা হাজির করেন। তাই তারা বলেন, “মুসলমান না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না। অমুসলিম মাত্রেই জাহান্নামী”, ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ একটা পতিতালয়ে যে মেয়েটির জন্ম হয়, সে মেয়েটি কী দোষ করেছিল তাহলে? ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে এমন সব প্রশ্নকে দূরে ঠেলে “মুসলিম না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না ব্যস” বলে বসেন। অথচ জন্ম ও বেড়ে ওঠার উপর কারো হাত নেই। দুনিয়ার প্রতিটা মানুষই ভিন্ন ভ