সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিশ্বাসীদের মাঝে ঐক্য নেই কেন? | যুক্তির কাঠগড়ায় ইসলাম

তৃতীয় ভাগ: যুক্তির কাঠগড়ায় ইসলাম

||

পর্ব-১: বিশ্বাসীদের মাঝে ঐক্য নেই কেন?



ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের একটা সাধারণ অভিযোগ হলো, তোমাদের নিজেদের মাঝে ঐক্য নেই কেন? মুসলিমদের মাঝে শিয়া-সুন্নি বিভেদ কেন? কিংবা, Abrahamic religion অর্থাৎ ইহুদী ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলাম ধর্মের মাঝে ঐক্য নেই কেন?

পাঠক! কথা তো সত্য। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মুসলমানদের মাঝে বহু দলাদলি বিভক্তি রয়েছে। বিভক্তি রয়েছে খ্রিষ্টনাদের নিজেদের মাঝেও। আর ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমান পরস্পর মারামারি করে আসছে বহুকাল যাবৎ। অথচ সবাই-ই এক আল্লাহর অনুসারী! এক আল্লাহরই প্রেরিত তিনজন নবীর অনুসারী। তাহলে তাদের মাঝে ঐক্য নেই কেন?

সংক্ষেপে বললে গেলে উত্তরে বলতে হয়, যেকোনো সমাজের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস (যান্) এর স্তরে থাকে। খুব কমসংখ্যক মানুষই জ্ঞান (ইলম) এর স্তরে থাকে, এবং তারও মাঝে খুব কম সংখ্যকই ঈমান (প্রশান্তি ও নিরাপত্তা) অর্জন করতে পারে।

প্রথমে একদল মানুষ জ্ঞান দিয়ে বুঝে শুনে সত্যকে (হক্ব) গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বংশধরদের কাছে সেটা হয়ে যায় “বাপ-দাদার ধর্ম”। আর বাপ-দাদার ধর্মকে মানুষ ‘বিশ্বাস’ করে আঁকড়ে ধরে, এবং নতুন কিছু আসলেই চোখ বুঁজে সেটার বিরোধিতা করে, যুক্তি দিয়ে যাচাইও করে না। ফলে জ্ঞানী ও ঈমানদারদের বংশধরেরাই অন্ধবিশ্বাসী গোঁড়া ধার্মিকে পরিণত হয়। উদারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করলে বিষয়টা পরিষ্কার বোঝা যাবে। ধরুন, আজকে পৃথিবীর প্রায় সবাই মূর্তিপূজারী। এখন মূসা (আ.) এলেন। আল্লাহর পরিচয় দিলেন, যুক্তি দিলেন। কী ঘটবে?

[দৃশ্যপট-১]

মূসা (আ.) এলেন।

১. অধিকাংশ লোক (মূর্তিপূজারীরা) বিরোধিতা করলো। কারণ তারা বাপ-দাদার ধর্মকে ‘বিশ্বাস’ করে আঁকড়ে ধরে আছে। এর বিপরীত কোনোকিছু তারা যুক্তি দিয়ে যাচাই করতেও রাজি নয়।

২. কিছুসংখ্যক নিরপেক্ষ, যুক্তিবাদী ও সত্যপ্রেমী মানুষ মূসা (আ.)-কে মেনে নিল। কারণ তারা জ্ঞান (‘ইলম’) ব্যবহার করে সত্যকে (হক্ব) চিনে নিয়েছে। এদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই খুব কম।

৩. আরো বেশকিছু মানুষ মূসা (আ.)-কে মেনে নিলো। তবে তারা “অন্যের দেখাদেখি” মূসা(আ.)-কে মেনে নিয়েছে, যুক্তি ও জ্ঞান দিয়ে নয়। কিংবা ফিউচার লিডার ধারণা করে সুবিধার আশায় তাঁর পক্ষ নিয়েছে।

[দৃশ্যপট-২]

এরপর ঈসা (আ.) এলেন।

১. অধিকাংশ লোক (মূর্তিপূজারী+ইহুদীরা) বিরোধিতা করলো। কারণ মূর্তিপূজারীরা মূর্তিকে ‘বিশ্বাস’ করে, ইহুদীরাও ‘বিশ্বাস’ করে তাদের বাপ-দাদার ধর্মকে; নতুন কথা শুনতেই তারা নারাজ।

২. (মূর্তিপূজারী+ইহুদীদের মধ্য থেকে) কিছুসংখ্যক সত্যপ্রেমী মানুষ খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করলো। তার জ্ঞান ও ঈমান এর স্তরে ছিলো।

৩. আরো কিছু লোক খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করলো, তবে বুঝেশুনে নয়। তারা দেখাদেখি ‘বিশ্বাস’ করেছে, কিংবা সুবিধার আশায় খ্রিষ্টান হয়েছে।

[দৃশ্যপট-৩]

এরপর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এলেন।

১. অধিকাংশ লোক (মূর্তিপূজারী+ইহুদী+খ্রিষ্টানেরা) বিরোধিতা করলো। তারা প্রত্যেকে ‘বিশ্বাস’ এর স্তরে আছে। প্রত্যেকে যার যার বাপ-দাদার ধর্মকে ‘বিশ্বাস’ করে আঁকড়ে ধরে আছে। নতুন কথা শুনেও দেখবে না তারা।

২. (মূর্তিপূজারী+ইহুদী+খ্রিষ্টানদের মধ্য থেকে) কিছুসংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করল। তারা যুক্তি দিয়ে বুঝে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

৩. আরো কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করলো, তবে সত্যিকার দার্শনিকভাবে বুঝে নয়। বরং সুবিধার আশায় কিংবা অন্যান্য কারণে। কিংবা দেখাদেখি ‘বিশ্বাস’ করেছিল।

এবার উপরের তিনটি দৃশ্যপটের প্রতিটির ১ নং পয়েন্ট দেখুন।

মূসা (আ.) এর বিরোধিতাকারী: মূর্তিপূজারী।

ঈসা (আ.) এর বিরোধিতাকারী: মূর্তিপূজারি + মূসা (আ.) এর অনুসারী!!

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিরোধিতাকারী: মূর্তিপূজারী + মূসা (আ.) এর অনুসারী + ঈসা (আ.) এর অনুসারী!!

নবীর বিরোধিতাকারীদের তালিকায় কিভাবে ধার্মিক লোকেরা ঢুকে পড়েছে, দেখেছেন? নতুন নবী আসলেই আগের নবীর অনুসারীরা তাঁর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়!! একারণেই শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিরোধিতাকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি: মূর্তিপূজারী, ইহুদী, খ্রিষ্টান সবাই।

কিভাবে এটা হলো? ঐযে! প্রথমে অল্পকিছু মানুষ যুক্তি দিয়ে বুঝে ধর্ম গ্রহণ করে। তারপর ঐ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা যখন বাড়ে, তখন বেশিরভাগ মানুষের কাছে সেটা হয়ে যায় “পারিবারিক ও সামাজিক বিশ্বাস”। তাই তারা ‘বিশ্বাসকে’ অন্ধভাবে আঁকড়ে ধরে। ধর্ম হয়ে যায় বিশ্বাসের বিষয়। আল্লাহরই নতুন নবীকে তারা প্রত্যাখ্যান করে। শুধু তা-ই না, সমাজে যেভাবে ধর্মচর্চা চলে, সেটাকেই সঠিক বলে চোখবুঁজে বিশ্বাস করে। হয়ত তার ধর্মের কিতাবের সাথে তার সামাজিকভাবে চর্চা করা কাজের মিল নেই। কিন্তু তাতে কী? তখন তারা বলবে: আমার বাপ-দাদা কি ভুল করেছিলেন? এত বড় বড় আলেম কি ভুল বুঝেছিলেন? ইত্যাদি।

যাহোক, আসুন এবার তাহলে দার্শনিক পন্থায় প্রশ্ন করি। ধরি, হযরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী না। এরপর আরেকজন নবী আসবেন, উনি হবেন “শেষনবী”। তাহলে –

[দৃশ্যপট-৪]

“শেষনবী” এলেন।

১. অধিকাংশ লোক (মূর্তিপূজারী+ইহুদী+খ্রিষ্টান+মুসলমানেরা) বিরোধিতা করল।

২. …

মুসলিম: “ভাই থামেন থামেন! না না, আমরা বিরোধিতা করব কেন? আমরা মুসলমান, আমরা কুরআন হাদীস মানি, আমরা আল্লাহর নবীর বিরোধিতা করব কেন?”

ও আচ্ছা? তাই নাকি? তা ভাই, কিসের ভিত্তিতে গ্যারান্টি দিচ্ছেন যে, আমরা মুসলমানরাই তখন “শেষনবীর” বিরোধিতা করব না?

জবাব নেই। কারণ, হযরত মুহাম্মদ (সা.) যদি শেষ নবী না হতেন, এবং যদি আগামীকাল একজন “শেষনবী” আসতেন, ঠিকঠিকই অধিকাংশ মুসলমান সেই নবীর বিরোধিতা করত। যেই বিরাট “মুসলিম উম্মাহ” নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই মুসলিম উম্মাহ!!





প্রিয় পাঠক!

কথাটি মেনে নিতে কি কষ্ট হচ্ছে? কারণ আপনি নিজে মুসলিম, তাই? তাহলে আমি অনুরোধ করব আবারো নিজেকে সেই নিরপেক্ষ ও অপ্রভাবিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার, যেটার কথা বারবার বলে আসছি। দুটো ঘন্টার জন্য ভুলে যান যে, আপনি মুসলিম। তারপর নিরপেক্ষ পর্যপেক্ষক হিসেবে উপরের দৃশ্যগুলো বিবেচনা করুন। ঐতিহাসিকভাবে এটাই সত্য যে, নতুন নবী আসলে আগের নবীর অনুসারীরাই বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছে। মুহাম্মদ (সা.) এর অনুসারীরা কি বিশেষ কোনো মাটি দিয়ে তৈরী যে, আরেকজন “শেষনবী” আসলে এই আমরাই তাঁর বিরোধিতা করতাম না? একজন মুসলিম হয়ত বলবেন, “ভাই, ঐ ইহুদি-খ্রিষ্টানরা গোঁড়া ছিলো, তাই ওরা ইসলামকে মেনে নেয়নি।” তখন আমি বলব, ও আচ্ছা, তাই নাকি? তা ভাই আপনার-আমার মাঝে যে গোঁড়ামি থাকবে না, এটা কি আল্লাহ গ্যারান্টি দিয়ে দিয়েছেন? আপনি-আমি কি বিশেষ মাটি দিয়ে তৈরী নাকি?

দেখা যাচ্ছে যে, গোঁড়ামির বীজ ইহুদীদের ভিতরে ছিল। আরেকজন নবী আসার পর সেটা প্রকাশিত হয়েছে। একইভাবে খ্রিষ্টনদের মাঝেও গোঁড়ামির বীজ ছিল। হযরত মুহাম্মদ (সা.) আসায় সেটা প্রকাশিত হয়েছে। একইভাবে আমাদের মুসলিমদের মাঝেও গোঁড়ামির বীজ আছে, কিন্তু যেহেতু আর কোনো নবী আসবেন না, তাই সেটা প্রকাশিত হচ্ছে না। ব্যাপারটা তাই নয়কি?

প্রিয় পাঠক!

নবীর বিরোধিতা করা হলো কুফুরি। অর্থাৎ, আল্লাহর প্রেরিত দ্বীনের (অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্মের) অনুসারীদের মাঝেও কুফুরির উপাদান লুক্কায়িত ছিল। হযরত মুহাম্মদ (সা.) আসার পর সেটা প্রকাশ পেয়েছ। তেমনি আমাদের মুসলিমদের ভিতরেও কুফুরির উপাদান আছে। যদি আরেকজন “শেষনবী” আসতেন, তখন সেই কুফুরী প্রকাশ পেত। আর সেই কুফুরীর উপাদানটা কী? সেটা হলো গোঁড়ামি ও অন্ধ বিশ্বাস। “আমিই সঠিক”-এর অহংকার। অর্থাৎ, যুক্তি ত্যাগ করে ধর্মকে (অন্ধ)বিশ্বাসের বস্তু বানিয়ে ফেলা। পক্ষান্তরে, কুফুরীর বিপরীত কী? ঈমান। ঈমানের উপাদান কী? বিচারবুদ্ধি তথা যুক্তিবোধ বা আক্বল।

অতএব, যুক্তি ঈমানের হাতিয়ার। আর অন্ধবিশ্বাস কুফুরির হাতিয়ার।

তো ভাই, আমি যদি বাপ-দাদার দেখাদেখি অন্ধভাবে ইসলাম পালন করি, এবং বিচারবুদ্ধি ব্যবহার না করি, উল্টা ইসলামে যুক্তি ব্যবহারের বিরোধিতা করি, তাহলে কি আমার আদৌ ঈমান আছে? এরপরও যদি নিজেকে ঈমানদার দাবী করি, তাহলে ঐসব ইহুদী-খ্রিষ্টানদেরকেও ঈমানদার বলতে হবে, যারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিরোধিতা করেছিল এবং আজও বিরোধিতা করে! কারণ তারাও তো নিষ্ঠা সহকারে বাপ-দাদার ধর্ম আঁকড়ে ধরে রেখেছে এবং ধর্মে যুক্তি প্রয়োগের বিরোধিতা করছে! তারাও তো তাদের ধর্মের আমলগুলি করে, যেভাবে আপনি-আমি নামাজ-রোজা করি!

অতএব, প্রিয় পাঠক!

যুক্তির কাঠগড়ায় যখন আমরা ইসলামকে দাঁড় করিয়েইছি, তখন এতে যে নাস্তিকরাই শুধু মনঃক্ষুণ্ণ হবে তা নয়, বরং তাতে হিন্দু-ইহুদী-খ্রিষ্টান সবার অন্ধবিশ্বাসেই আঘাত আসবে, এবং আঘাত আসবে এমনকি আমাদের মুসলমানদের উপরেও: কারণ আমরাও অনেকে অন্ধবিশ্বাস লালন করি, যুক্তি নয়। অর্থাৎ, যুক্তি এমন একটা জিনিস, যা অন্ধবিশ্বাস ও গোঁড়ামির মূলে কুঠারাঘাত করে। তা সেই অন্ধবিশ্বাসের চশমা নাস্তিক-ইহুদী-হিন্দু-খ্রিষ্টানের চোখেই থাকুক, কি মুসলমানের চোখেই থাকুক।

আবারও সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করছি, যা বইয়ের ভূমিকায় বলেছি: কোনো ধর্মের পক্ষেও নয় বিপক্ষেও নয়, বরং নিরপেক্ষ, অপ্রভাবিত মনে নিছক সত্যকে উদঘাটনের লক্ষ্যেই আমাদের এই স্রষ্টাভাবনা। প্রিয় পাঠক, শক্ত করে বসুন, কারণ আমরা এখন যুক্তিতর্কের ময়দানে নামতে যাচ্ছি। আশপাশের কোনোকিছুই আমাদের অনুকূলে নাই। সবাই আমাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে; হয় প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের পক্ষে, নাহয় বিপক্ষে। কিন্তু আমরা কুরআনের দর্শন মোতাবেক –

১. নিরপেক্ষভাবে সবার বক্তব্য শুনবো, এবং যুক্তি দিয়ে যাচাই করে সঠিকটা গ্রহণ করবো,

২. বাপ-দাদার ধর্ম কিংবা সমাজের প্রচলিত ধর্মের (কিংবা নাস্তিকতারও) অন্ধ পক্ষপাতিত্ব করব না,

৩. যুক্তি দিয়ে সবকিছু যাচাই করব, অর্থাৎ আক্বল তথা বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করব, কেননা এটাই ঈমানের দরজা,

৪. এবং প্রয়োজনে নিজের বিরুদ্ধে নিজেই অবস্থান নেব, কেননা এটাই আল্লাহর আদেশ।

তবু সত্যের সাথে আপোষ করব না, ইনশাআল্লাহ।

_______________________________

যুক্তি ঈমানের হাতিয়ার।

পক্ষান্তরে, অন্ধবিশ্বাস কুফুরির হাতিয়ার।

ফেইসবুক বিশ্বাস বনাম যুক্তি বিতর্কে অংশ নিন

এটি বইয়ের তৃতীয় ভাগ। এর আগে প্রথম ভাগদ্বিতীয় ভাগ পড়ে নিন।

মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক জনপ্রিয়

স্রষ্টাভাবনা

প্রথম ভাগ: দার্শনিকের স্রষ্টাভাবনা  | | পর্ব-১: উৎসের সন্ধানে উৎসের সন্ধান করা মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। মানুষ তার আশেপাশের জিনিসের উৎস জানতে চায়। কোথাও পিঁপড়ার লাইন দেখলে সেই লাইন ধরে এগিয়ে গিয়ে পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বের করে। নাকে সুঘ্রাণ ভেসে এলে তার উৎস খোঁজে। অপরিচিত কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী কিংবা যেকোনো অচেনা জিনিস দেখলে চিন্তা করে – কোথা থেকে এলো? কোথাও কোনো সুন্দর আর্টওয়ার্ক দেখলে অচেনা শিল্পীর প্রশংসা করে। আকাশের বজ্রপাত, বৃষ্টি, রংধনু কিংবা সাগরতলের অচেনা জগৎ নিয়েও মানুষ চিন্তা করে। এমনকি ছোট শিশু, যে হয়তো কথাই বলতে শেখেনি, সে-ও কোনো শব্দ শুনলে তার উৎসের দিকে মাথা ঘুরায়। অর্থাৎ, মানুষ জন্মগতভাবেই কৌতুহলপ্রবণ। একটা বাচ্চা জ্ঞান হবার পর চিন্তা করে – আমি কোথা থেকে এলাম? আরো বড় হবার পর চিন্তা করে – আমার মা কোথা থেকে এলো? এমনি করে একসময় ভাবে, পৃথিবীর প্রথম মা ও প্রথম বাবা, অর্থাৎ আদি পিতা-মাতা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? চারিদিকের গাছপালা, প্রকৃতি, পশুপাখি, গ্রহ-নক্ষত্র-মহাবিশ্ব – এগুলিরই বা সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন উৎসুক মনে খেলে যায়। তখনই শুরু হয় সমস্যা। নির

খোদার ন্যায়বিচার | অনন্তের পথে

আগের পর্ব: আল্লাহ কেন পথভ্রষ্ট করেন? | সূচীপত্র দেখুন প্রশ্ন: এমনও অনেকে আছে, যারা ইসলামের নামও শোনেনি, যাদের কাছে কুরআন পৌঁছায় নাই, তাদের কী হবে? তারা কেন জাহান্নামে যাবে? তাদের কী দোষ? কোথায় খোদার ন্যায়বিচার? নাস্তিকদের একটা কমন প্রশ্ন এটা। এবং প্রশ্নটা অবশ্যই অত্যন্ত যৌক্তিক। কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মুসলমানই ইসলামকে যৌক্তিক ও দার্শনিক মানদণ্ডে যাচাই করে তারপর সত্য হিসেবে গ্রহণ করে মানে না, বরং তারা মানে বাপ-দাদার ধর্ম হিসেবে, (অন্ধ)বিশ্বাসের বস্তু হিসেবে। আর তাই এসকল প্রশ্নের যৌক্তিক সত্য জবাবও তারা দিতে পারেন না। দেবেনই বা কিভাবে, নিজেই তো জানেন না! উপরন্তু নিজের (অন্ধ)বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য গোঁজামিলে পরিপূর্ণ ভুলভাল ব্যাখ্যা হাজির করেন। তাই তারা বলেন, “মুসলমান না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না। অমুসলিম মাত্রেই জাহান্নামী”, ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ একটা পতিতালয়ে যে মেয়েটির জন্ম হয়, সে মেয়েটি কী দোষ করেছিল তাহলে? ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে এমন সব প্রশ্নকে দূরে ঠেলে “মুসলিম না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না ব্যস” বলে বসেন। অথচ জন্ম ও বেড়ে ওঠার উপর কারো হাত নেই। দুনিয়ার প্রতিটা মানুষই ভিন্ন ভ

আত্মদর্শন | অনন্তের পথে

আগের পর্ব: জ্ঞানের জগত ও হৃদয়ের জগত | সূচীপত্র দেখুন আমি কে? “I am not this hair, not this skin But the soul that lies within.” - Maulana Rumi আমি কে - এই প্রশ্ন যুগে যুগে দার্শনিকদেরকে চিন্তিত করেছে। অনেকে বলেছে, মানব মস্তিষ্কেই কেবল আমিত্বের অনুভূতি বিদ্যমান। কথা হয়ত সত্য। তবে যেহেতু তারা ক্বলবের জগত সম্পর্কে বেখবর, তাই তারা তাদের সীমিত জ্ঞানবৃত্তের ভিতরেই উত্তর দেবার চেষ্টা করেছে। মানুষের আত্মা হলো আসল খলিফা وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ (١٧٢) أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ (١٧٣) “আর (হে রাসূল!) যখন আপনার রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বহির্গত করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং তাদের নিজের ওপর তাদেরকে সাক্ষ্য করলেন; (তাদেরকে প্রশ্ন করলেন,) আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, অবশ্যই, আ